দিল্লির পরামর্শ যুব কংগ্রেসকে |
তৃণমূল-বিরোধী আন্দোলনে ‘ছাড়পত্র’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দিল্লির ‘পরামর্শ’ মেনে যুব কংগ্রেসকে আন্দোলনে নামার ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিলেন দলীয় নেতৃত্ব। আর সেই আন্দোলন হবে শরিক তৃণমূল নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ এবং কংগ্রেস কর্মীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের যুব সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে ‘অক্সিজেন’ জোগাবে ওই আন্দোলন বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
যুব কংগ্রেসের প্রথম পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে বুধবার নজরুল মঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া থেকে শুরু করে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজীব সতাভও স্পষ্ট জানিয়েছেন, জোট রাজনীতির বাধ্যবাধ্যকতা মেনে চললেও, পথে নেমে আন্দোলনই সাংগঠনিক শক্তি বাড়াবে। যুব কংগ্রেসকে পথে নামার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী মানসবাবু বলেন, “বাম-জমানার মতো এখনও খুনের রাজনীতি চলছে। রক্তাক্ত হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা। আমি বা প্রদীপ’দা যেখানে পারব না, যুব কংগ্রেস সেখানে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করুক।” গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রচারেও নির্দেশ দেন মানসবাবু। |
পঞ্চায়েতে ‘বিকেন্দ্রীকরণের নামে আমলাশাহীকরণে’র অভিযোগকে হাতিয়ার করেছে যুব কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার নজরদারিতে আমলাদের দায়িত্ব দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েছেন তা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। প্রদীপবাবুদের সুরেই পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনের রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনেও যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ তুলেছেন, ‘পঞ্চায়েতকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে দলের (তৃণমূল) মনোনীত সচিবকে দিয়ে কাজ চালাবার উদ্দেশে এই ব্যবস্থাটি আনা হয়েছে’। এদিন বিষয়টি উসকে দিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “কোনও জেলা পরিষদ ঠিক কাজ করতে না পারলে সরকার তা ভেঙে দিতে পারে। নির্বাচিত প্রতিনিধির বদলে প্রশাসন পঞ্চায়েত নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা বরদাস্ত করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।”
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরাসরি তৃণমূল নেত্রীকেই আক্রমণ করেন রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। তিনি তৃণমূলের ‘অত্যাচারের বিরুদ্ধে’ যুব কংগ্রেস কর্মীদের প্রতিবাদে সরব হওয়ার আহ্বান জানান। যুবদের কংগ্রেসের ‘ভিত্তি’ বলে উল্লেখ করে দীপা বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট থেকে দলের শক্তি বাড়াতে হবে।তা শুরু করতে হবে যুবদের দিয়েই।” এবং নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে কেন্দ্র বা রাজ্য নেতৃত্বের মুখাপেক্ষী না থেকে যুব কংগ্রেসকে পথে নামার ছাড়পত্র দেন যুব কংগ্রেস সর্বভারতীয় সভাপতিও।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে শরিক কংগ্রেসের ‘আক্রমণ’কে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসকে ‘ফড়িয়াদের দল’ বলে অভিহিত করে বলেন, “ওঁরা কী বললেন, না-বললেন তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আমরা ১৪ মাসে গ্রামোন্নয়নে কী করেছি, না-করেছি তা কেন্দ্রের মন্ত্রী জয়রাম রমেশ জানেন। তিনি যদি কিছু বলেন তার জবাব দেব।”
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এ দিন পঞ্চায়েতে যুবদের আরও বেশি প্রার্থী করার আবেদন জানান রাজ্য যুব কংগ্রেস সভানেত্রী ও সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। বলেন,“পঞ্চায়েতে দলকে সাহায্য করতে চায় যুব কংগ্রেস। পঞ্চায়েতে যুবদের বেশি প্রার্থী করলে সংগঠন উজ্জীবিত হবে।” এর প্রেক্ষিতেই রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “যে যুব কংগ্রেস কর্মীরা এলাকায় ভাল ভাবে সংগঠনের কাজে সামিল, তাঁদের পঞ্চায়েতে টিকিট দেওয়া হবে, এই আশ্বাস দিচ্ছি।” |