মোট ১৮০টি বাক্সে ছিল দু’টি ব্যাঙ্কের তিনটি শাখার ৮১ কোটি টাকার বাতিল নোট। তার মধ্যে ৪৫ লক্ষ টাকার নোট ভর্তি একটি বাক্স ট্রেনের পার্সেল ভ্যান থেকে বেমালুম লোপাট হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় ট্রেনে ওই সব বাক্সের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই ভাবে অভিযোগের আঙুল উঠেছে সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্যাঙ্কের তিন শাখার পরিদর্শকদের দিকেও। তদন্তে নেমেছে সিআইডি।
বাতিল নোট পাল্টে নতুন নোট আনার জন্য টাকা ভর্তি ওই সব বাক্স মুম্বইয়ের রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পাঠানো হচ্ছিল। মাঝপথে বা অন্য রাজ্যে নয়, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের প্রহরায় থাকা একটি বাক্স লোপাট হয়ে যায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেন রওনা হওয়ার আগেই। ঘটনার প্রায় ১০ দিন পরে তদন্তে নেমে এই তথ্য জানতে পেরে চোখ কপালে উঠেছে রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তাদের। তাঁদের চিন্তার কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা ট্রেনে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় পাহারার দায়িত্ব থাকে মূলত রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের জওয়ানদের উপরেই। তাই ওই বাহিনী দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
আবার ব্যাঙ্কের পরিদর্শক অফিসারদেরও সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছে না সিআইডি। ডিআইজি (সিআইডি) শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর শালিমারে সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্যাঙ্কের তিন ব্রাঞ্চের অফিসারেরা যখন পার্সেল ভ্যানে উঠে বাক্স পরীক্ষা করেন, তখনই তাঁরা দেখেছিলেন যে,
একটি বাক্স কম আছে। কিন্তু তাঁরা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পুরোপুরি চেপে যান। ফলে চুরির বিষয়টি এখানে জানা যায়নি। পরে জানা যায়।” প্রশ্ন উঠেছে, ট্রেনে বাক্স পরীক্ষক ব্যাঙ্ক অফিসারেরা একটি বাক্স কম থাকার বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন কেন? বাক্সটি গেলই বা কোথায়? রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, গত ১ সেপ্টেম্বর কলকাতার তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৮১ কোটি টাকার বাতিল নোট ১৮০টি বাক্সে ভরে একটি কন্টেনারে বোঝাই করে শালিমার ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সব বাক্সে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রেডক্রস ও ব্রেবোর্ন রোড শাখা এবং ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ধর্মতলা শাখার টাকা ছিল। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর কন্টেনার থেকে বার করে বাক্সগুলি কুরলা এক্সপ্রেসের পার্সেল ভ্যানে তোলা হয়। ওই দিন দু’টি ব্যাঙ্কের তিন শাখার অফিসারেরা বাক্সগুলি পরীক্ষাও করেন। পরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়নের ১৪ জন জওয়ান এবং ব্যাঙ্কের চার জন কর্মীর পাহারায় ট্রেনটি মুম্বই রওনা হয়। ট্রেনটি মুম্বইয়ে পৌঁছনোর পরে, ৪ তারিখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারা দেখেন, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের রেডক্রস শাখার ১১০টি বাক্স ছিল। সেগুলির মধ্যেই একটি বাক্স উধাও হয়ে গিয়েছে। তাঁরা ১১ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিষয়টি জানান। তার পরে বাক্সের দায়িত্বে থাকা পাহারাদার পুলিশকর্মী ও ব্যাঙ্ককর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অর্থ আত্মসাৎ ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করা হয়। বুধবার সকালে শালিমারে ঘটনার তদন্তে যান রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (সিআইডি) শঙ্করবাবু, খড়্গপুরের রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বড়াল, হাওড়ার ডিডিআই দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা শালিমারে জিআরপি থানায় বসে ওই টাকা ভর্তি বাক্সের পাহারায় থাকা সুবেদারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে ডিআইজি (সিআইডি) বলেন, “বাক্সটি ট্রেন রওনা হওয়ার আগেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। পরিদর্শক ব্যাঙ্ক অফিসারেরা তা জেনেও চেপে গিয়েছিলেন কেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেটা জানার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ট্রেনে টাকার পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীদেরও। |