হলদিয়ায় বৈঠক শিক্ষামন্ত্রীর
বিদ্যাসাগরে ‘অ্যাকাডেমিক অডিটের’ নির্দেশ
বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ‘অ্যাকাডেমিক অডিটের’ নির্দেশ দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আপাতত শুধু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া টাউনশিপের হলদিয়া ভবনে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তভুক্ত ৪৪টি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে ‘এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের’ একটি বৈঠকে একথা বলেন তিনি। জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়া সম্ভাবনার কথাও তিনি এ দিন জানিয়েছেন। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু আধিকারী, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাকে ‘মডেল’ হিসাবে গড়তে চেয়েছেন জানিয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, “দলতন্ত্র ও আনুগত্যের ফলে ৩৪ বছরে শিক্ষার যে ভরাডুবি হয়েছে তা পুনরুত্থানে সচেষ্ট হয়েছি আমরা।” তিনি জানান, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখে, সেখানকার সমস্যা জেনে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এ দিন মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠমোগত উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে জোর দেন মন্ত্রী, সাংসদ, উপাচার্য থেকে অধ্যক্ষ সবাই। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকেরা কবে ইন্টারভিউ দিয়ে কীভাবে এসেছেন তা দেখতে হবে এবং সেই সময়ে ‘নমিনেশনের’ ক্ষেত্রে ‘সিলেকশন কমিটি’তে কারা ছিলেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।” তিনি আরও বলেন, “উপাচার্যকে এই অডিট করার কথা বলেছি, পাশাপাশি এক শ্রেণির ক্লাস না করা, টিউশনের র্যাকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া অধ্যাপকদের চিহ্নিত করতে চেয়ে তালিকা চেয়েছি।” বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও গ্রহন করা হয় এই বৈঠকে। তার মধ্যে রয়েছে, শিক্ষকদের কলেজে আরও বেশি সময় দেওয়া, তাঁরা ছাত্রদের সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবহার করছেন কিনা, আবার ছাত্ররাও কেমন ব্যবহার করছে, ক্লাসে সমস্যা তৈরি করছে কিনা সে বিষয়েও নজর দেওয়ার কথা বলা হয়। শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রয়োজনে এ ব্যাপারে উচ্চশিক্ষা দফতরকে কঠোর নির্দেশিকা পাঠাতে হবে। যে নির্দেশিকার বলে অধ্যক্ষরা শিক্ষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখতে দু’টি প্রস্তাবও গ্রহন করা হয়েছে।
বৈঠকে ব্রাত্য বসু ও শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র
একটি হল কলেজে কলেজে ‘বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্ট সিস্টেম’ চালু করা, অন্যটি ক্লাস রুমে গোপন ক্যামেরা বসানো। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। অধ্যক্ষেরা অপ্রতুল শিক্ষক সংখ্যার কথা জানিয়ে, শূন্যপদ পূরণ করার আবেদনও জানান এ দিন। এছাড়া উন্নয়ন খাতে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনার কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি জানান, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের অর্থ ব্যয় করতে দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে। ফলে খরচের হিসাব দেখাতেও দেরি করছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এই বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজ্যে বেশকিছু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। কোচবিহার, আসানসোল এবং দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাপ কমাতে পূর্ব মেদিনীপুরেও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তবে এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলে কেন হলদিয়াতে এই বৈঠক করা হল তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। যদিও শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, এখানে ভাল এবং বড় একটা কনফারেন্স হল রয়েছে। তাছাড়া কলকাতা থেকে যাঁরা আসবেন এটা তাঁদের অনেক কাছে হবে। উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এটুকু বলতে পারি, শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই। মন্ত্রী, সাংসদ সকলেই জানিয়েছেন, নিশ্চিন্তে কাজ করুন। এ ভাবে চললে শুধু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন, রাজ্যের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েই আরও দ্রুত উন্নতি ঘটবে।” যদি চাপ না-ই থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক না করে হলদিয়া যাওয়া কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে কী সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর আসার অসুবিধে রয়েছে বলেই দীর্ঘ পথ উজিয়ে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একাধিক সদস্যদের নিয়ে যাওয়া? উপাচার্যের কথায়, “মন্ত্রীই হলদিয়াতে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হয়তো যাতায়াতের সুবিধে রয়েছে বলেই উনি হলদিয়াতে বৈঠক করলেন।” অন্তত ২ মাস ছাড়া যাতে এই ধরনের বৈঠক হয় সে জন্যও মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন উপাচার্য। তারই সঙ্গে বৈঠকগুলিতে সাংসদ, মন্ত্রীদের থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন! বৈঠকে সাংসদ ও একাধিক মন্ত্রী থাকলেই তো রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটবে, তবু কেনও এই আমন্ত্রণ। উপাচার্যের ব্যাখ্যা, “ওঁরা জন প্রতিনিধি। ফলে বহু ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরাও ওঁদের কাছে যান। এমনও হতে পারে আমাদের নজর এড়িয়ে যাওয়া কোনও সমস্যা ওঁদের কাছ থেকেও জানতে পারি। ভাল পরামর্শ পেতে পারি। তাতে লাভই হবে। এই কারনেই আমন্ত্রণ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.