গোটা দেশ তখন মেতে তাঁর অতিমানবীয় প্রত্যাবর্তন নিয়ে। অথচ বিষণ্ণ ছিলেন জীবন যুদ্ধ জয়ী নায়ক। মঙ্গলবারের চিপক থেকে হোটেলে ফিরে মা শবনমের সামনে হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি। বলেছিলেন, “সবই হল কিন্তু ম্যাচটাই তো জেতাতে পারলাম না!” এই যন্ত্রণা নিয়েই আজ কলম্বো পৌঁছোলেন যুবরাজ সিংহ। ভারতীয় দল রওনা দেওয়ার পর টিভি-তে যুবরাজের সেই আক্ষেপের কথা বলছিলেন শবনম।
চেন্নাইয়ের ২৬ বলে ৩৪-এর ইনিংসটার পরে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখে অবশ্য চওড়া হাসি। গতকাল বলেছিলেন, “যাক, যুবরাজের উপর থেকে চাপটা সরল।” এ দিন, দল নিয়ে কলম্বো পৌঁছে জানিয়ে দিলেন, যুবরাজ ফেরায় দলে ভারসাম্য ফিরেছে। শাহরুখ খানের শুভেচ্ছা, আর এক ক্যানসার জয়ী, চিত্রপরিচালক অনুরাগ বসুর আবেগপূর্ণ বার্তা, টুইটারে অভিনন্দনের বন্যার মাঝে সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মতো খুঁতখুতে বিশেষজ্ঞও স্বীকার করেছেন, “যুবরাজ একশো ভাগ ফিট না হলেও ও ফেরায় ভারতীয় দল আরও শক্তিশালী হল।”
শুধু সন্তুষ্ট নন যুবরাজ নিজে। যদিও ভারতীয় দলের উজ্জ্বল কমলা টি-শার্ট আর গাঢ় নীল জিনসে কলম্বো বিমানবন্দরে নামার পর থেকে বেশ ফুরফুরেই দেখিয়েছে তাঁকে। চাপমুক্তির স্বস্তি চোখে-মুখে। যুদ্ধং দেহী মেজাজের টুইটও করে ফেলেছেন। |
স্বাভাবিক কারণেই, ভারতের বিশ্বকাপ নায়ককে নিয়ে অন্য মাত্রার উৎসাহ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে। কলম্বোয় নেমেই ধোনিকে পড়তে হল যুবরাজ নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে। ক্যানসারের মতো মারণ রোগ থেকে সেরে ওঠার পর এত তাড়াতাড়ি যুবরাজকে দলে ফেরানোটা আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত কি না, জানতে চাওয়া হয় ধোনির কাছে। ভারত অধিনায়ক জবাবে বলেন, “এটুকু বলতে পারি, যুবরাজ দলে ফেরায় আমি অসম্ভব খুশি। ওর মতো চ্যাম্পিয়ন ম্যাচ-উইনার দলে থাকা মানে দলের শক্তি অনেক বেড়ে যাওয়া। যুবরাজ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হওয়ার পাশাপাশি পঞ্চম বোলারের ভূমিকাতেও অসম্ভব কার্যকর।” কোহলি, রায়নারা থাকলেও তিনি যে পঞ্চম বোলারের ভূমিকায় যুবরাজেই আস্থা রাখছেন, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ধোনি।
যুবরাজ নন, ধোনিকে ভাবাচ্ছে ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব। বলেছেন, “পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাল করাটা আমাদের কাছে জরুরি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। তবে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরাসরি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নেমে মানিয়ে নেওয়া।” টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দু’টো প্র্যাক্টিস ম্যাচ পাচ্ছে এই ফরম্যাটে র্যাঙ্কিংয়ে সাতে থাকা ভারত। শনিবার শ্রীলঙ্কা এবং সোমবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ভারতীয় কোচ ডানকান ফ্লেচার অবশ্য যেটাকে প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট বলেই মনে করছেন। বলেছেন, “চেন্নাইয়ে হারলেও দল নিয়ে পরীক্ষা সফল হয়েছে। সামনে দু’টো ম্যাচ। প্রস্তুতির জন্য সেটাই যথেষ্ট।”
যুবরাজের জন্যও ওই দু’টো ম্যাচ যথেষ্ট কি না, সেটাই প্রশ্ন। চেন্নাইয়ে তাঁর ম্যাচ ফিটনেস নিয়ে বেশিরভাগ প্রশ্নের নিরসন হয়েছে। তবু রানিং বিটউইন দ্য উইকেট নিয়ে কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা এখনও আছে। আছে লম্বা টুর্নামেন্টের ধকল তিনি কতদূর নিতে পারবেন, সেই চিন্তা। সঙ্গে অবশ্যই থাকছে একটা বাড়তি চাপ-- ক্যানসারকে হারানোর পরে এ বার ২০০৭-এ দেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এনে দেওয়া নায়কের কাছে প্রত্যাশা যে আরও বেড়েছে দেশবাসীর! যুবরাজ নিজেও চেন্নাইয়ে জেতাতে না পারার যন্ত্রণাটা কলম্বোয় ভুলতে চাইবেন। ‘‘তোমার চিত্রনাট্য কে লেখে?’’ গ্রাহাম গুচ একবার প্রশ্ন করেছিলেন ইয়ান বোথামকে। যুবরাজের চিত্রনাট্য যিনি লেখেন, তাঁর কলম কী ভাবছে, বলা কঠিন। তবে ক্যানসারকে হারিয়ে ক্রিকেট মাঠে ফেরার আবেগমথিত লোকগাথা মঙ্গলবার লেখা হয়ে গিয়েছে। এ বার পেশাদার ক্রিকেটের নির্মম মাটিতে ফের যুবরাজ। সেই রুক্ষ জমিতে দাঁড়িয়ে আরও এক বার বিশ্বকাপে নায়ক হওয়া তাঁর চিত্রনাট্যে আছে কি না, সেটাই এখন দেখার। |