আমি সব সময় ভাবতাম, অ্যান্ডি মারে কবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবে। এবং অ্যান্ডি প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামটা যে ওর প্রিয় হার্ডকোর্ট সারফেসে জিতবে সেটাও সর্বদা বলে এসেছি। মানে, হয় নিউ ইয়র্ক বা মেলবোর্নে। তবে আমার এই সব টেনিস জ্ঞানই জানলা দিয়ে উড়ে পালানোর জোগাড় হয়েছিল, যে ভাবে দু’সেট পিছিয়ে পড়ার পরেও অদম্য জকোভিচ পরের দুটো সেট অনবদ্য খেলে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালটা চূড়ান্ত পঞ্চম সেটে নিয়ে গিয়েছিল! ওই সময় আমার মনে হচ্ছিল, অ্যান্ডি যদি এ বারও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সুযোগটা উড়িয়ে দেয়, তা হলে তার জন্য ওকে হয়তো বহু দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
নোভাক আর অ্যান্ডির খেলার স্টাইলটা একই রকম। আমি সব সময় মনে করি ওদের দু’জনের লড়াইয়ে যে লোকটা কোর্টের মধ্যিখানটা কন্ট্রোল করবে সে-ই শেষমেশ টিকে থাকবে। অ্যান্ডি সেই কাজটা দারুণ করেছে, বিশেষ করে দ্বিতীয় সেটে। র্যালিগুলো শেষ হওয়ার মুহূর্তে দু’জনের মধ্যে ওকেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভাল পজিশনে থাকতে দেখা গেছে কোর্টে। তা সত্ত্বেও মারে যখন ৪-০ এগিয়ে যায়, তখন কেমন যেন মনে হচ্ছিল, ব্যাপারটা এত সহজে হবে না। এ বারই হয়তো একটা পাল্টা লড়াই দেখব। |
টেনিসে এই মুহূর্তে নোভাকের মতো নাছোড় এবং ভয়ডরহীন প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। এই ম্যাচেও ও যে ভাবে লড়াইয়ে ফিরল, অবিশ্বাস্য! দু’জনের মধ্যে কয়েকটা র্যালি যেন শেষই হচ্ছিল না। দু’জন একই স্টাইলের প্লেয়ারের মধ্যে লড়াই হলে যে ব্যাপারটা কেউ আশা করতেই পারে। তবে আমি আরও একবার অবাক হলাম অ্যান্ডির ফোরহ্যান্ডের পাওয়ার দেখে! এটাই মারের খেলায় ইভান লেন্ডলের সব সেরা অবদান। এই ফোরহ্যান্ড শটের জোর আমার খুব ভাল জানা আছে। ২৩ বছর আগে এমনই একটা দিনে আমাকে যা সামলাতে হয়েছিল। কারণ, সে বারই আমি আমার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব জিতি, ফাইনালে লেন্ডলকে হারিয়ে।
অ্যান্ডি মারের ম্যাচে আবার ফেরা যাক। ওর ফিটনেসও আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রতিটা বলের কাছে পৌঁছনোর জন্য কোর্টে প্রচুর দৌড়েছে। জকোভিচকেই বরং মাঝেমধ্যে দেখা গেছে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার জন্য খেলাটাকে স্লো করে দিতে। পঞ্চম সেট সব সময় তারই অনুকূলে যায়, যে প্রথমেই অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে। অ্যান্ডির সৌভাগ্য ওই সময় নেটকর্ডেরও দাক্ষিণ্য পেয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকে থেকে নিজের চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল আর ওর দেশের ৭৬ বছরের অধরা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ভূত ঘাড় থেকে নামাল। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে না পারার মতো প্লেয়ার অ্যান্ডি কোনও দিনই নয়। কিন্তু ফাইনালের পরে ওর কথা ধরেই বলতে হয়, ‘সেটা কবে ঘটবে’ সেটাই ছিল মোক্ষম প্রশ্ন। আমি ভাগ্যবান, অ্যান্ডির বর্তমান বয়সের অনেক আগেই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ফেলেছিলাম। কিন্তু কখনও কখনও নিজেকে নিয়ে দ্বিধা অনেক ভাল প্লেয়ারের সর্বনাশ করে দেয়। তা ছাড়া এই প্রজন্মের টেনিস প্লেয়ারদের ওপর ফেডেরার, নাদাল এবং অতি সম্প্রতি জকোভিচের এতটাই বেশি প্রাধান্য যে, অ্যান্ডির সাফল্যের আগে ৩০টার মধ্যে ২৯টা গ্র্যান্ড স্ল্যামই ওই তিন মহারথীই জিতেছিল। যে পরিসংখ্যান আমার কাছে অত্যাশ্চর্যের কাছাকাছি।
অ্যান্ডি শেষ পর্যন্ত এলিট ক্লাবে ঢুকতে পেরেছে এবং আমি নিশ্চিত এটা ওকে আরও অনেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার আত্মবিশ্বাস যোগাবে। আমি সেইসঙ্গে অবশ্য এই জয়ের জন্য কৃতিত্ব দেব গত মাসে উইম্বলডনে অ্যান্ডির ফেডেরারকে হারানোকেও। ম্যাচটা অলিম্পিক ফাইনাল হলেও উইম্বলডনের কোর্টে উইম্বলডনের মাস্টারকে হারিয়ে অ্যান্ডি সেই প্রথম নিজেকে অন্য লেভেলে আবিষ্কার করেছিল। কাঁধের ওপর থেকে বেশ কিছুটা ভার লাঘব করতে পেরেছিল। এই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে এসেছিল অনেক হালকা অথচ উজ্জ্বল মেজাজ নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের পর আগের অ্যান্ডির টেনিসজীবন সায়াহ্নের দিকে চলে গেল। আর নতুন অ্যান্ডি তাকিয়ে থাকছে পুরুষ টেনিসের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। |