|
|
|
|
প্রবন্ধ ২... |
ব্যুরোক্র্যাট অর্থে ‘আমলা’? ভুল এবং অন্যায় |
ভুল, কারণ বাংলায় শব্দটির এই ব্যবহারের স্বীকৃতি নেই। অন্যায়, কারণ
শব্দটিতে
এক অধীনতার বোধ নিহিত। শব্দের সূত্রে মানসিকতার বিচার করেছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় |
আজকাল ‘আমলা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় বাংলায় প্রশাসক, সরকারি অফিসার, আই এ এস, ডব্লিউ বি সি এস, সচিব-উপসচিব প্রভৃতি নানা নামের মানুষকে এক কথায় চিহ্নিত করতে। সংবাদপত্রেই এই শব্দের ব্যবহার বেশি, ইদানীং সাধারণ কথোপকথনেও শব্দটা একটু একটু করে ঢুকে পড়ছে। অ্যাকাডেমিক গদ্যে ব্যুরোক্রেসি অর্থে আমলাতন্ত্র শব্দটা ব্যবহার করা হয়, যদিও পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলতে জনপ্রশাসন তর্জমারও চল আছে। তবে গত কয়েক দশকে মূলত সংবাদপত্রের সৌজন্যে ব্যুরোক্র্যাট, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, পাবলিক সার্ভেন্ট, সিভিল সার্ভেন্ট, ইত্যাদি বহুবিধ শব্দের অনুষঙ্গে বাংলায় ‘আমলা’ শব্দটা ক্রমেই বেশি বেশি করে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। আমার মতে, শব্দটা ভুল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যঞ্জনাটা আপত্তিজনক। ভাষার শুদ্ধি ও রাষ্ট্রের সুশাসন, উভয় কারণেই বিকল্প শব্দ দরকার। আপত্তির কারণগুলি একে একে বিবৃত করা যেতে পারে।
প্রথমত, বৃত্তির বর্ণনার জন্য সচরাচর ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত আত্মপরিচিতির রীতিকে মান্য করা হয়। ডাক্তাররা নিজেদের ডাক্তার বলেই জানেন। ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের ইঞ্জিনিয়ার বলে ডাকেন। নিজেকে যে বৃত্তি-পরিচয়ে ডাকি, এবং নিজের সেই বৃত্তির যে বর্ণনা কাগজে দেখি, তাদের মধ্যে কোনও বিরোধ সাধারণত কোনও পেশায় দেখা যায় না। আমলা শব্দে এর একটা ব্যতিক্রম আছে। কোনও অফিসার নিজেকে আমলা বলে ডাকেন না। কোনও সচিব প্যাডের উপরে আমলা পরিচয়ে আত্মবিজ্ঞাপন দেন না। রাজকর্মচারীদের কোনও অ্যাসোসিয়েশনে আমলা শব্দের উল্লেখ নেই। আসলে, শব্দটি এক কৃত্রিম আরোপ।
দ্বিতীয়ত, অনেক সময় আলাদা আলাদা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা পেশা-পরিচিতির রীতি থাকলেও বৃহত্তর বৃত্তি গোত্রের জন্য একটা সাধারণ অভিধার ব্যবস্থা থাকে। সংবাদপত্রে রিপোর্টার এক রকম কাজ করেন, সাব এডিটর আর এক রকম, কিন্তু দুই পক্ষই সাংবাদিক বা জার্নালিস্ট। শিল্পী শব্দেও এই সাধারণীকরণের ব্যঞ্জনা আছে। চিত্রকর, গায়ক ও নৃত্যশিল্পীকে আলাদা আলাদা শব্দগুচ্ছেও বর্ণনা করা যায়, আবার সাধারণ শিল্পী পরিচয়েও তাঁদের সমান সম্মানে অভিহিত করা সম্ভব। কারিগর বা ম্যানেজার শব্দের মধ্যেও গোত্রগত সাধারণীকরণ আছে। রাষ্ট্রকর্মীদের পঙ্ক্তিমালায় এই স্তর-উত্তীর্ণ এবং নির্বিশেষ সাধারণ পরিচয় বাংলা ভাষায় এখনও স্বাভাবিক ভাবে উঠে আসেনি। আমলা শব্দটা তাই আরও অস্বাভাবিক ঠেকে। প্রজাতিগত সাধারণীকরণ দরকারি, কিন্তু শব্দকে গ্রহণীয় হয়ে আসতে হবে চলিত রীতির লোকমান্য অভ্যাস থেকে।
|
|
‘আমলা’তন্ত্রের মহাতীর্থ। মহাকরণ, কলকাতা
|
তৃতীয়ত, হাল আমলে যখনই কোনও সাধারণ গোত্রগত বৃত্তি-পরিচয় বর্ণনার জন্য আমলা শব্দের ব্যবহার শুনি, একটা নৃতাত্ত্বিকের প্রাথমিক অনভ্যস্ত আড়ষ্টতার গন্ধ পাই। একটা হঠাৎ আবিষ্কৃত জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি হলে সেই গোষ্ঠীর নানা পঙ্ক্তির মানুষগুলিকে আলাদা ভাবে ঠিক বুঝে উঠতে না পারলে আমরা যেমন একটা আলগা অস্পষ্ট শব্দ (যেমন, ট্রাইব) তাদের জন্য বরাদ্দ করে দিই, খানিকটা সেই রকম। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বার গিয়ে হকচকিয়ে যাই, তা হলে প্রোফেসর-অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর-রিসার্চ ফেলো এবং অন্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর পার্থক্যই হয়তো বুঝতে পারব না। এঁরা সব শিক্ষাকর্মী, এই জাতীয় একটা অস্পষ্ট অনুভূতি মাথায় কাজ করবে। চিন্তার এই অস্পষ্টতায় ব্যবহারিক কাজের ক্ষতি হতে পারে। হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও নার্সের পার্থক্য না বুঝে সকলকে সমগোত্রীয় চিকিৎসাকর্মী ভেবে নিরুদ্বিগ্ন থাকলে রোগীর আত্মীয়স্বজনের অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবু তো অনেক পেশায় বহু দিনের রীতিতে সাধারণ বর্ণনা ও বিশেষ বর্ণনা, উভয়ই চালু আছে। রাষ্ট্রকর্মীদের ক্ষেত্রে স্তরবিন্যাসের বাহুল্যের কারণে সাধারণ বর্ণনা খুব চালু না থাকায় উচ্চারণে আড়ষ্টতা কানে লাগে। সম্প্রতি ‘দেশ’ পত্রিকায় অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বিদায়ী মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু তাঁর সাক্ষাৎকারে বারংবার আমলা শব্দটা ব্যবহার করে বলেছেন যে, প্রথমটা তাঁর মনে হয়েছিল, জনবিরল দ্বীপে নৃতাত্ত্বিক যদি উপজাতিদের নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত থাকতে পারেন, তা হলে তিনিও নিশ্চয়ই দু’বছর নর্থ ব্লকে রাজনীতিবিদ আর আমলাদের নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন।
চতুর্থত, সাধারণ প্রজাতি বর্ণনার জন্য যদি কোনও সমন্বয়ী শব্দ নিতান্তই দরকার হয়, তবুও আমলা শব্দটা পরিত্যজ্য। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বঙ্গীয় শব্দকোষে আমলা শব্দের অর্থ বিবেচনা করতে গিয়ে অন্যতম সংজ্ঞা হিসাবে বলছেন: ‘উচ্চ কর্মচারীর অধীন কর্মচারী...’, অর্থাৎ আমলা শব্দের মধ্যেই অধীনতার ঘোষণা আছে। এই হীনতাকে সঙ্গী রেখে কোনও কর্মের পরিচয় নির্দিষ্ট হওয়া উচিত নয়। (পরন্তু কী আশ্চর্য, আমলায় নিম্নবর্গীয়ত্বের দ্যোতনা বেশি!) পেশার পরিচয়জ্ঞাপনে পোলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়ার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। খেয়াল করবেন, কর্মাচরণে কোনও অন্তর্নিহিত দৈন্য নেই। সে জন্য সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের কর্মচারী বলে পরিচয় দিতে অতটা কুণ্ঠিত বোধ করেন না। কিন্তু আমলা শব্দের জাত গেল বোধ হয় ওই অধীনতায়। আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান আমলা শব্দের ব্যাখ্যায় সতীনাথকে উদ্ধৃত করে টিপ্পনি দিয়েছে: ‘উকিল, মোক্তার, আমলা সবাই ঝুঁকে সেলাম করে জজসাহেবকে!’ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’য় বললেন, ‘যারা সাহিত্যের ওমরাও-দলের, যারা নিজের মন রেখে চলে, স্টাইল তাদেরই। আর যারা আমলা দলের, দশের মন রাখা যাদের ব্যবসা, ফ্যাশান তাদেরই’।
পঞ্চমত, কুলশীল বর্ণনায় দীনতার পরিচয় থাকলে নবীন প্রতিভা সেই কুলে প্রবেশ করতে চায় না। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে চাকরিতে ঢুকেছিলেন লেখক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আত্মজৈবনিক ‘লাল ফিতে’ উপন্যাসে আমলা শব্দ নিয়ে বন্ধুমহলে তাঁর অল্প বয়সের লজ্জা ও বিড়ম্বনার কথা ধরা আছে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলির পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে তাই কদাচ আমলা শব্দ দেখি না। বিনিয়োগকারীরা জানেন, আমলা শব্দটা অনুজ্জ্বল। সমাজও কথাটা মেনে নিক। উজ্জ্বলতর পরিচয় তৈরি হলে প্রশাসনে কাজ করতে তরুণতরুণীদের আগ্রহ বাড়বে।
ষষ্ঠত, শব্দটি যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অনৈতিহাসিকও বটে। বাংলা ভাষার ইতিহাসে (পদস্থ) রাষ্ট্রকর্মী অর্থে এই ভাবে কখনও আমলা শব্দের প্রয়োগ ছিল না। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ভারতীয় আই সি এস ছিলেন। রমেশচন্দ্র দত্তও সিভিলিয়ান ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের কুল-শিরোমণি। নবীন সেনও ডেপুটি। সুরেন বাঁড়ুয্যে সিভিলিয়ান না হয়ে নেতা হলেন। অরবিন্দও জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাইলেন না। সুভাষচন্দ্র আই সি এস ছেড়ে কর্পোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হয়েছিলেন। অন্নদাশঙ্কর রায় ডিস্ট্রিক্ট জাজ হয়েছিলেন, তারাপদ রায় রাইটার্সের ডেপুটি সেক্রেটারি। এঁদের কাউকে কখনও আমলা হিসেবে অভিহিত হতে শুনিনি। সাহিত্যের চরিত্র বা পাত্রপাত্রী হিসেবেও আমলা বলে কাউকে দেখিনি। বাংলার ব্যবহারিক ও সাহিত্যিক রীতিতে এ শব্দের বারোয়ারি চল নেই। শব্দটা রাষ্ট্রবৃত্তে অর্বাচীন।
সপ্তমত, আমলা শব্দটার জন্ম-ইতিহাস রয়েছে অন্যত্র। রাষ্ট্রকর্মের আধুনিক ইতিবৃত্তে নয়, এর জন্ম ও লালন হয়েছে জমিদারি সেরেস্তায়। অন্তত আমাদের সংস্কারে নায়েব-গোমস্তা-সেরেস্তাভৃত্যদের একটা ছবি ফুটে ওঠে আমলা শব্দটায়। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শব্দকোষ’-এ আমলা শব্দটার নীচেই আছে আর একটা শব্দ আমলাফয়লা। তার অন্যতম অর্থ মোসাহেব। রবীন্দ্রনাথেও আমলাফয়লাকে দেখব মফস্সলি কাছারিতে। ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসে কর্তাদের শুভ কাজে ভৃত্যসমাজে উৎসাহের ঢেউ উঠল: ‘আমলা ফয়লা পাইক বরকন্দাজ সবারই গায়ে চড়ল নতুন লাল বনাতের চাদর, রঙিন ধুতি।’ শরৎচন্দ্র আরও স্পষ্ট। ‘দত্তা’য় বিজয়ার ‘দাস-দাসী-আমলা-কর্মচারী’দের উপর নরেন তার স্বত্বের কথা বলে, অন্য দিকে ক্ষুব্ধ বিলাসেরও নায়িকার কাছে ক্ষুণ্ণ প্রশ্ন: ‘আমি চাকর? আমি তোমার আমলা?’ বাংলা সাহিত্যে আমলা মানেই কর্তার বশংবদ ভৃত্য মাত্র।
অথচ ব্যুরোক্র্যাসির ধ্রুপদী তাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবার বলবেন, ব্যুরোক্র্যাসিতে যুক্তিবোধের প্রকাশ প্রত্যাশিত। ওয়েবারপন্থীরা অনেকেই মনে করেন, প্রাক-আধুনিক অন্য সব পরিচালন ব্যবস্থায় নবাবি খামখেয়াল বা গোষ্ঠীগত পক্ষপাতের ঝোঁক। আধুনিক ব্যুরোক্র্যাসিতেই মিলবার চেষ্টা করেছে যুক্তির আয়োজন ও পুঁজির প্রয়োজন। যুক্তি এনেছে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও স্তরবিন্যস্ত নৈর্ব্যক্তিক প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, পুঁজি চেয়েছে নিয়মের নিশ্চয়তা। জমিদারি চালচলনকে সরিয়েই জন্ম নিয়েছে ব্যুরোক্র্যাসির নিয়ম-নিগড়। পরিহাসের কথা, আধুনিক ইউরোপের আইন-শাসিত সেই ব্যুরোক্র্যাটের বাংলা তর্জমা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমলা। কার্যকারণের অবিচলিত সম্পর্ক তৈরি করতে আধুনিক পুঁজি যে নিয়মতান্ত্রিকতা চাইল, তার বাংলা হয়ে দাঁড়াল আমলাশাহি। ঔপনিবেশিক খণ্ডিত আধুনিকতা ও কিছু রাষ্ট্রকর্মীর ক্লৈব্যের প্রতি অবজ্ঞায় সাংবাদিকের বাংলা ফিরে তাকাল জমিদারি আঁতুড়ঘরে। রাজপুরুষ, রাজকর্মচারী, সিভিলিয়ান, জজ-ম্যাজিস্ট্রেট, হাকিম, সচিব, রাষ্ট্রকর্মী ও জনসেবক ইত্যাকার বহুবিধ বর্ণময় শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে বাংলা গদ্যে আমলা নামক একটি শব্দকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠছে যেন একটা আপতিক ঐকমত্য।
বৃত্তির বর্ণনায় সে বৃত্তির শ্রেষ্ঠ ও স্বাভাবিক আদর্শ বিধৃত থাকবে, এটাই কাম্য। আমলার আচরণ ক্ষেত্রবিশেষে মোসাহেবি হলেও শুধু সেই বিবেচনায় তার পেশার নামকরণ চলে না। কিছু শিক্ষক হয়তো ছাত্রদের পীড়ন করেন। তথাপি আমরা আমাদের শিক্ষকদের পীড়ক না বলে শিক্ষক বলি। কিছু যাজক অনাচারী, তবুও আমরা তাঁদের বৃত্তির নামকরণে যাজনের কথাই স্মরণ করি। পেশা, ক্রিয়া ও নামকরণের সমন্বিত ও স্বচ্ছ সংযোগে বৃত্তির বর্ণনা উদ্ভাসিত হয়। সেই উদ্ভাসে কখনও কখনও ইতিহাসের দীর্ঘ ছায়া পড়ে। শীলভদ্র, দীপঙ্কর, সুশ্রুত বা জীবকদের স্মরণ করে অনুজরা নিজ নিজ বৃত্তির সুপ্ত মহত্ত্বের সন্ধান পেতে পারেন। আমলা শব্দ এই মহত্ত্বের ছায়া থেকে বঞ্চিত।
অথচ রাষ্টকর্মের ইতিহাসেও এই পশ্চাদ্বর্তী প্রলম্বিত মহৎ ছায়ার সন্ধান সম্ভব। বস্তুত, এই সন্ধান প্রয়োজনীয়। ফিলিপ মেসন তাঁর বিখ্যাত বই ‘দ্য মেন হু রুলড ইন্ডিয়া’য় ভারতে সিভিলিয়ানদের ঐতিহ্য ও সংস্কারের সন্ধান করতে গিয়ে প্লেটো পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। ‘গার্ডিয়ান’ শব্দের ব্যবহার করে তিনি আধুনিক আই সি এস অফিসারকে যুক্ত করেছেন প্রাচীন গ্রিক অ্যাকাডেমির নিষ্কাম অভিভাবকদের সঙ্গে। হালের রাষ্ট্রতাত্ত্বিক আগামবেন ব্যুরোক্র্যাটের জীবনচর্চার শ্রেষ্ঠ আদর্শের মধ্যে খুঁজতে চেয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান ধর্মতত্ত্বের অ্যাঞ্জেলদের নিরাসক্ত কর্মকে। কাজিদের ন্যায়াদর্শ নিয়ে বহু গল্পই আজ প্রবাদে পরিণত। অযুত অনাচার সত্ত্বেও সেই সব সমুচ্চ আদর্শের একটা ছায়া পড়বে না বৃত্তির নামপরিচয়ে? নৈর্ব্যক্তিক রাষ্ট্রিক আইনানুগ ন্যায়াদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ভৃত্যত্বের স্মারক ওই আমলা শব্দ নিয়েই আমরা বসে থাকব? কোনও দিন কিছুতেই বুঝব না যে, আমলাদের ব্যঙ্গের বিষয় করে আমরা আসলে গণতন্ত্রের অনুবর্তী নিয়মনিষ্ঠ সুশাসনের সম্ভাবনাকেই ক্রমশ আঘাত করে চলেছি?
বহুবিধ বিকল্পের মধ্য থেকে ভাষা কোন শব্দকে গ্রহণ করবে এবং কোন শব্দকে বর্জন করবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা মূর্খামি। কিন্তু ইতিমধ্যে যে পরিভাষায় নৈর্ব্যক্তিক সুশাসনের যুক্তিসিদ্ধ প্রত্যাশার বদলে কাছারি-সেরেস্তার হীনতা বোধ ও অনাধুনিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্তব্য। |
|
|
|
|
|