সম্পাদক সমীপেষু...
যে ভাবে ৪৯৮এ ধারার অপব্যবহার হতে দেখি়
শাশ্বতী ঘোষের ‘মেয়েরা সুরক্ষা পেতে চায়, শাস্তি দিতে নয়’ (৯/৮) প্রতিবেদনটি পড়লাম। আমি একটি আদালতে গাছতলার টাইপিস্ট। যত মানুষ আমাদের কাছে তাঁদের অভাব-অভিযোগগুলি টাইপ করাতে আসেন, তাঁদের মধ্যে ৪৯৮এ ধারার অভিযোগের টাইপ প্রতি দিন ১/২টি, কখনও আরও বেশি। এই টাইপ করার সুবাদে অভিযোগকারিণী যখন তাঁদের আইনজীবী অথবা তাঁদের নিয়োজিত মানুষকে অভিযোগগুলি জানান, সেই সময় কখনও কখনও কিছু কিছু কথা সরাসরি কানে আসে বা কখনও কখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অনেক বিষয়ই জানতে পারি। অনেক সময় মনে হয়, অনেক কথাই ঠিক, আবার কখনও মনে হয়, সব কথা ঠিক নয়। একটা ধোঁয়াশা থেকেই যায়।
যে সব অভিযোগকারিণী ওই বিষয়ে সুরক্ষা পাওয়ার আশায় আসেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের ওই ধারা বা আইন সম্বন্ধে কোনও সম্যক ধারণা না-থাকার কারণে পরবর্তী কালে বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাঁদের এই অজ্ঞতার সুযোগ নেন কিছু সুযোগসন্ধানী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি। দেখা যায়, যাঁরা সত্যিই অত্যাচারিত, তাঁরা নালিশ করছেন না। তাঁরা শেষ পর্যন্ত সংসার টেকাবার আশায় ধৈর্য ধরছেন। কিন্তু অন্য অনেকেই দুরভিসন্ধিবশে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। বিপদগ্রস্ত করছেন স্বামী-সহ তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের। এ-ও দেখা যাবে, ৪৯৮এ ধারার সুযোগ নিয়ে কিছু কুচক্রী মহিলা তাঁর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে সামাজিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থা করছেন। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কৃতকর্মের জন্য এই ধারার সঠিক প্রয়োগ যতটা না-হয়, তার চেয়ে বেশি এই ধারার অপপ্রয়োগই হয়।
অভিজ্ঞতায় এটা দেখেছি, নববধূ হিসাবে বাড়িতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই শ্বশুর, শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের আচার-আচরণ তাঁর কাছে সুখকর নয় এই অজুহাতে তিনি আর শ্বশুরবাড়িতে না-থেকে শুধু মাত্র তাঁর স্বামীকে নিয়ে অন্যত্র থাকবেন বলেই নানাবিধ সমস্যা তৈরি করেন এবং স্বামীর উপর মানসিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। স্ত্রীর বিবাহের পূর্বে হয়তো পূর্ব প্রেমিক বা অন্য কোনও সমস্যা থাকার কারণে স্বামীকে বা তাঁর পরিবারের লোকজনকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করে মিথ্যা অজুহাতে জেল হাজত খাটাতে দেখেছি। অতি তুচ্ছ কারণে একে অপরকে সন্দেহ করার জন্য সুখের সংসারে ভাঙন ধরতেও দেখেছি।
আইনজীবী ফ্লেভিয়া অ্যাগনেস বলেছেন, নিম্ন আদালতের উকিলদের একাংশ আর পুলিশ এই ধারার অপব্যবহারের জন্য দায়ী। একমত হয়েও বলছি, আরও একটি শ্রেণি এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছে, যাদের অবদান কম নয় ‘দালাল’ সম্প্রদায়ভুক্ত কিছু ব্যক্তি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় রাজনীতিক। এই বিষয়ে অভিযোগ করার জন্য স্থানীয় থানা বা মামলা করার জন্য স্থানীয় নিম্ন আদালতেই যেতে হয়। যাঁরা থানায় অভিযোগ জানাতে আসেন, তাঁদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা’-র ভীতি কাজ করে (সেই ভীতিতেই এরা সরাসরি থানা-পুলিশের কাছে ঘেঁষতে চান না)। আদালত বা উকিল সম্বন্ধেও ভয় থাকে। এই ভীতিতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগকারী সরাসরি উকিলের কাছে না-গিয়ে বা থানায় না-গিয়ে এলাকার কোনও দালালের খপ্পরে পড়েন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদেরও খপ্পরে পড়েন। থানার এক শ্রেণির অফিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে অভিযোগ ও চার্জশিটে কারচুপি করা থেকে আরম্ভ করে হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু কর্মীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ডাক্তারি রিপোর্টে গরমিল করতে এরা সিদ্ধহস্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.