|
|
|
|
বৃদ্ধাকে হত্যা, সিসিটিভির দৌলতে ধৃত খুনি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
বাড়িতে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাই ধরিয়ে দিল শিলচরের সত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধার দুই খুনিকে। সেই সূত্রেই গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের মূল পাণ্ডাকেও।
২ লক্ষ টাকার ‘সুপারি’ নিয়ে রবিবার রাতে শিলচর-হাইলাকান্দি রোডের সুন্দরীমোহন লেনের বাসিন্দা, কাঞ্চনদেবী ছাজেরকে প্রাণে মেরে ফেলে বিষ্ণু গোয়ালা। নিহতের বাড়ি ও দোকানে দুধ দিত সে। তার সঙ্গে ছিল ১৪ বছর বয়সি ভাগ্নে, সঞ্জু। আর পুরো ঘটনার ছক যিনি কষেছিলেন, সেই রাধানাথ যাদব কাঞ্চনদেবীর ফ্ল্যাটের পাশের বাড়িটির মালিক। যাদবের বাড়ির নীচতলাতেই কাঞ্চনদেবীর মিষ্টির দোকান। পারিবারিক ব্যবসা। একমাত্র ছেলে বিশাখাপত্তনমে থাকে। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই সামলাতেন শিলচরের কাজ-কারবার। ওই দোকান নিয়ে কাঞ্চনদেবী ও রাধানাথের বিবাদ চলছিল দীর্ঘ দিন থেকে। এ নিয়ে আদালতেও মামলা ঝুলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিজের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বৃদ্ধা। পাশের ঘরে থাকত দোকানের কর্মচারীরা। তাদেরই একজন সে রাতে দোকান থেকে ফিরে এসে দেখেন, উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন কাঞ্চনদেবী। দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু গলায় একটি কালশিটে দাগ। সঙ্গে সঙ্গে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সুন্দরীমোহন লেনের বহুতল বাড়িটির চার তলায় কাঞ্চনদেবীর ফ্ল্যাটে তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভির একটি ভাঙা ক্যামেরা পায়। মেঝেতে পড়ে ছিল ৬৪ হাজার টাকাও। আলমারির লকারও ছিল খোলা। প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ ভাঙা ক্যামেরাটি বাজেয়াপ্ত করে। পরে কাঞ্চন দেবীর নিকটাত্মীয় ও দোকান কর্মচারীদের সূত্রে জানা যায়, মোট চারটি ক্যামেরা লাগানো ছিল ফ্ল্যাটে। পুলিশ পরে আরও দুটি ক্যামেরা-সহ সিসিটিভির মূল রেকর্ডারটি আটক করে। মেলেনি শুধু একটি ক্যামেরা। এতে অবশ্য তদন্তের কাজে কোনও হেরফের ঘটেনি। কারণ পুরনো দৃশ্য দেখার জন্য ক্যামেরার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। রেকর্ডারই যথেষ্ট। এই প্রযুক্তিটি জানত না বিষ্ণু-সঞ্জুরা। নিয়মিত দুধ দেওয়ার সুবাদে দু’টি ক্যামেরার কথা তাদের জানা ছিল। তাই খুন করে বেরোবার সময় মুখোমুখি ক্যামেরাটি খুলে নালায় ফেলে দেয় এবং অন্যটিকে ভেঙে রেখে যায়।
সিসিটিভির রেকর্ডারেই পুলিশ পুরো খুনের দৃশ্যটি দেখতে পায়। দোকান কর্মচারীরা দুধ সরবরাহকারী বিষ্ণুকে শনাক্ত করে। তাকে গ্রেফতারের পর ভাগ্নেরও খোঁজ মেলে। পরে পুলিশি জেরায় তারাই জানায় রাধানাথ যাদবের কথা। বৃদ্ধাকে মেরে ফেলার জন্য সে ক’দিন থেকেই বিষ্ণুকে উস্কে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকার ‘সুপারি’ পাকা হয়। গ্রেফতারের পর বিষ্ণু জানায়, নানা কারণে বাজারে প্রচুর টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে। তাই দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে সে খুন করতে রাজি হয়ে যায়। কী ভাবে কী করতে হবে রাধানাথই তা ছকে দেয়। সেই অনুসারে রবিবার সন্ধ্যায় ভাগ্নেকে নিয়ে ৪০ বছরের বিষ্ণু যায় কাঞ্চনদেবীর ফ্ল্যাটে দুধ দিতে। সে প্রতিদিন ওই সময়েই দুধ দেয়। ফলে সিসিটিভিতে তাকে দেখেও কোনও সন্দেহ হয়নি বৃদ্ধার। দরজা খুললে সঞ্জুকে দেখিয়ে বিষ্ণু বলে, তাকে তাঁর নাতনির বাড়িতে পরিচারকের কাজে লাগানো যেতে পারে। এ নিয়ে অবশ্য দু’দিন আগেও কাঞ্চনদেবীর সঙ্গে তার কথা হয়। নাতনির জন্য পরিচারক খুঁজছিলেন কাঞ্চনদেবী। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের তিনি ঘরে ডেকে নেন। দুজনকে দু’গ্লাস জলও খেতে দেন কাঞ্চনদেবী। তখনই আচমকা মামা-ভাগ্নে গলা টিপে ধরে বৃদ্ধার। ছটফট করতে করতে মেঝেতেই প্রাণ হারান কাঞ্চনদেবী। বিষ্ণু তখন বৃদ্ধার কোমর থেকে চাবির গোছা নিয়ে আলমারি থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে পালায়। সে সময় ৬৪ হাজার টাকা যে নীচে পড়ে যায়, তা আর খেয়াল করেনি সে বা তার ভাগ্নে।
কিন্তু রাধানাথ কেন মারতে গেল কাঞ্চনদেবীকে? ধরা পড়ে পুলিশকে সে জানায়, অনেক দিন থেকেই বৃদ্ধাকে দোকানঘরটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তার নিজেরও ইচ্ছে, এ রকমই একটি মিষ্টির দোকান খুলবেন ওই জায়গাতেই। কিন্তু কাঞ্চনদেবী কিছুতেই দোকান ছাড়তে রাজি নন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও ঝুলছে। তাই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটে রাধানাথ। সুপারি দেয় বিষ্ণুকে। |
|
|
|
|
|