|
|
|
|
অস্বস্তিতে কারা দফতর |
বন্দি উধাওয়ের তদন্তভার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্ত্রীকে |
অত্রি মিত্র |
আগে থেকেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল এক কারাকর্ত্রীর বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও দুই বিদেশি বন্দি পলায়নের ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকেই। তারও পরে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সেই কারাকর্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। পুরো ঘটনায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে কারা দফতর। যিনি নিজেই অন্য দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, তাঁকেই বন্দি পালানোর মতো গুরুতর ঘটনার তদন্তভার কেন দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে দফতরেই।
২৮ অগস্ট মহম্মদ সবুজ ও মহম্মদ আলি মণ্ডল নামে দুই বাংলাদেশি বন্দি প্রেসিডেন্সি জেল থেকে পালায়। জেলের দেওয়ালের পাঁচিলে রং করার জন্য তৈরি বাঁশের কাঠামোর সাহায্যে পাঁচিল ডিঙিয়ে পালায় তারা। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখতে কারা দফতরের অতিরিক্ত আইজি (দক্ষিণ) বিচিত্রা ভট্টাচার্যকে তদন্তের দায়িত্ব দেন আইজি (কারা) রণবীর কুমার। কিন্তু রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিনের মধ্যেই বিচিত্রাদেবীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কারা দফতরের এক যুগ্মসচিবকে এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঠিক কী ধরনের অভিযোগ আছে ওই কারাকর্ত্রীর বিরুদ্ধে? কারা দফতর সূত্রের খবর, বিচিত্রাদেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত দু’টি।
• বেআইনি ভাবে সরকারি অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা। সরকারি অর্থে তিনি নিজের ব্যবহারের জন্য একটি ‘গ্যারাজ’ তৈরি করেছেন।
• সরকারের নিয়ম মেনে কয়েক বছর আগে একটি গাড়ি কেনার জন্য তিনি নিজের এবং পরিবারের সম্পত্তির হিসেব দিয়েছিলেন কারা দফতরের কাছে। সেই হিসেবেও গরমিল আছে বলে অভিযোগ।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি বিচিত্রাদেবী। ওই কারাকর্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কারা দফতরের যুগ্মসচিবও।
কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁকে অন্য ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হল কেন?
আইজি (কারা) বলেন, “অভিযোগ যে-কারও বিরুদ্ধেই উঠতে পারে। তার মানেই তিনি দোষী, এটা তো বলে দেওয়া যায় না।”
আইজি (কারা) এ কথা বললেও এক জন ‘বিতর্কিত’ কারাকর্ত্রীকে বন্দি পলায়নের তদন্তভার দেওয়ায় প্রশাসনিক মহলেও প্রশ্ন উঠছে। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “ওই অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরনো। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বন্দি পালানোর মতো বড় ঘটনার তদন্তভার কেন তাঁকে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।” আইজি (কারা) বলেন, “আগে অভিযোগ প্রমাণ হোক। তার মধ্যে ওঁকে দিয়ে তদন্ত করাতে অসুবিধা কী!”
জেলের নিরাপত্তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই দুই বন্দি দিনের বেলাতেই যে-ভাবে পালিয়ে গিয়েছে, তাতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কারা দফতরকে। ৩১ অগস্ট রাজ্যের জেল সুপারদের কাছে পাঠানো একটি নির্দেশিকায় সে-কথা স্বীকার করে নিয়ে রণবীর কুমার বলেছেন, “বন্দিরা যে-ভাবে পালিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে নিরাপত্তায় বড়সড় গাফিলতির প্রমাণ। যেখান দিয়ে ওই বন্দিরা পালিয়ে যায়, সেখানে কোনও পাহারাই ছিল না। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি দাগি অপরাধী বা উগ্রপন্থীরাও এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারত। এই ঘটনায় কারা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।” প্রাথমিক তদন্তের পরে বন্দি পালানোর ঘটনায় প্রেসিডেন্সি জেলের ৪ কর্মীর কাছে কারণ দর্শানোর নোটিসও পাঠিয়েছেন আইজি। |
|
|
|
|
|