নানা কারণে রামপুরহাট থানার বগটুই গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম পড়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। সেই ঝামেলার জেরে মাঝে মধ্যে দুই পাড়ার মধ্যে বোমাবাজি এবং তাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমনই এক ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) বাসব তালুকদার বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যারা বোমা বাঁধছিল সকলেই দুষ্কৃতী। তবে এদের পিছনে যারা আছে তাদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাবে।” ঘটনার পরে গভীর রাতে এলাকায় গিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। বুধবার সকালে গিয়েছিলেন ডিআইজি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর রামপুরহাট থানারই দখলবাটি গ্রামে এক বাসিন্দার বাড়িতে বোমা বাঁধার সময়ে বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবার বগটুই গ্রামের বাগানপাড়া এলাকায় কাঁদরের ধারে ফাঁকা মাঠে বোমা বাঁধার সময়ে ৫ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। |
তদন্তে ডিআইজি। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম। |
মৃতেরা হলনুর আলম শেখ (১৯), চন্দন শেখ (২১), মানাই শেখ (১৯), ইয়ার শেখ (২২), মিরাজুল শেখ (২২)। প্রত্যেকের বাড়ি পশ্চিমপাড়ায়। জখম সকলেক বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তবে চন্দন শেখকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এ দিকে, বগটুই গ্রামের ঘটনার জন্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। ডিআইজি বলেন, “পলিশ যদি সক্রিয় না থাকত তা হলে আগের একটি ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করত না। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক বা অন্য কোনও সম্পর্ক আছে কি না সে ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় বসে বোমা বাঁধা হচ্ছিল বিস্ফোরণে বাঁশ গাছের পাতা পুড়ে গিয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বোমা বাঁধার সরঞ্জাম। বগটুই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রাথমিক ও আপার প্রাথমিক স্কুল, দু’টি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র, শিশুশিক্ষাকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ ছিল। কাঁদরে মৃতদেহ বা অন্য কোনও সরঞ্জাম পড়ে আছে কি না তার খোঁজে তল্লাশিও চলেছে। এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, “পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ার মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হয়। অথচ এলাকায় মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের থাকার জায়গা। কিন্তু পুলিশি তৎপরতা তেমন ভাবে চোখে পড়ে না।”
দু’টি পাড়ার মধ্যে রাজনৈতিক রেষারেষিকেও দায়ী করেছেন তাঁরা। গত রবিবার এক সমাবেশে বামফ্রন্টের কিছু কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল। তার জেরে রবি ও সোমবার দুই পাড়ার মধ্যে বোমাবাজিতে দু’জন জখম হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ব্রজ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “যারা বোমা বাঁধছিল সকলেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতারা তাদের বোমা বাঁধতে উৎসাহিত করছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরা রামপুরহাট শহরে মিছিল করেছি।”
যদিও তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। সকলেই দুষ্কৃতী।” এসপি হৃষিকেশ মিনা বলেন, “তদন্ত চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।” |