পিয়ালা তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। গোটা দুর্গাপুরেই একের পর এক অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটে চলেছে। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন নগরবাসী। গণধর্ষণের ঘটনায় তড়িঘড়ি ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু অগুনতি ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির কিনারা করা দূরস্থান, এক জনও দুষ্কৃতীরও নাগাল পায়নি পুলিশ।
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পুলিশ কমিশনারেট গড়া হয়েছে, তা-ও এক বছরের বেশি হয়ে গেল। পুলিশের হাতে আধুনিক গাড়ি এসেছে। শপিং মল, হোটেল, জনবহুল মোড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। হাজার ‘সিভিক পুলিশ’ নিয়োগ হয়েছে। অথচ অপরাধ কমছে না বলে শহরবাসীর অভিযোগ।
তথ্য বলছে, এ বছরের প্রথম মাসটা মোটামুটি নির্বিঘ্নে কাটলেও ফেব্রুয়ারি থেকেই অঘটন শুরু হয়ে গিয়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আবর্জনার মধ্যে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে গুরুতর জখম হয় রাঁচি কলোনির সাত বছরের এক বালিকা। পরের দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ভরসন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের উদয়শঙ্কর বীথিতে নিজের বাড়িতে খুন হন আসানসোলের মহিলা থানার ওসি শম্পা বসুর বাবা, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের প্রাক্তন কর্মী দিলীপকুমার বসু। তাঁর ছোট মেয়ে, বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোনালিদেবী রাত ৮টা নাগাদ বাড়ি ফিরে বাবার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সেই খুনের কিনারা আজও হয়নি।
এর পরেও নানা ঘটনা ঘটেছে। জুনের মাঝামাঝি ধান্ডাবাগে একটি স্কুলের পিছনে বল ভেবে খুদেরা খেলতে যেতেই বোমা ফাটে। পরে পুলিশ গিয়ে আরও তিনটি বোমা উদ্ধার করে। কেউ ধরা পড়েনি। গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের বাঘা যতীন পথের এক বাড়ির দরজার তালা ভেঙে টাকা-গয়না নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। এর দিন দশেক আগেই সেল সমবায়ের জসীমউদ্দিন পথেও একটি বাড়িতে চুরি হয়েছিল। কোনওটিরই কিনারা হয়নি। এর পরে ৯ সেপ্টেম্বর সিটি সেন্টার এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সাতসকালে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মৌলনা আজাদ সরণির একটি খাদ্য ও পানীয় সংস্থার অফিস থেকে টাকা লুঠ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। আর ওই রাতেই পিয়ালা কালীমন্দির এলাকায় গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে যায়।
এর পরেও এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব অবশ্য দাবি করে, পুলিশ বসে নেই। দুষ্কৃতীদের রমরমা রুখতে শপিং মল ও জনবহুল মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সিটি সেন্টারে দু’টি ও বিধাননগরে অতিরিক্ত টহলদার গাড়ি নামানো হয়েছে। তাঁর মতে, অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে বাইরে থেকে অস্থায়ী ভাবে থাকতে আসা লোকজন। এই ধরনের লোকেদের ছবি ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। একটি ফর্মও তৈরি করা হয়েছে। তাতে বাইরে থেকে আসা লোকজনের পরিচিতি, ছবি, স্থায়ী ঠিকানা, কার মাধ্যমে তিনি শহরে এসেছেন, কোন সংস্থায় কী কাজ করছেন, বাড়ি ভাড়া কে খুঁজে দিয়েছে ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য থাকবে। এতে প্রথমত অপরাধ করার আগে লোকে দু’বার ভাববে। তার পরেও অপরাধ ঘটলে তা কিনারা করতে সুবিধা হবে।
এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “যাঁরা বাড়ি ভাড়া দেন, তাঁদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে সচেতনতা গড়ারও কাজ চলছে।” তবে সত্যিই কি এ সবে কাজ হবে? বা আদৌ সব ঠিকঠাক করে উঠতে পারবে পুলিশ? কমবে অপরাধের সংখ্যা?
উত্তর হয়তো জানা যাবে আগামী কয়েক মাসেই। |