গণধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগে দুর্গাপুরে আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার পর্যন্ত এই নিয়ে ১১ জনকে ধরা হল। পুলিশ আরও দু’জনকে খুঁজছে।
আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, ধৃতের নাম রাজেশ কোড়া। মঙ্গলবার রাতে তাকে পিয়ালা গ্রামের বাড়ি থেকে ধরা হয়। বুধবার তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিদের আগেই হাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল, শুক্রবার অভিযোগকারিণীকে দিয়ে তাদের শনাক্ত করানো (টিআই প্যারেড) হতে পারে। রবিবার গভীর রাতে দুর্গাপুরে পিয়ালা কালীবাড়ি এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরেই পুলিশ ওই এলাকার দশ জনকে ধরেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাজেশকে আটক করে জেরা করা হলেও গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু তদন্ত এগোতেই পুলিশ বোঝে, সে-ই নাটের গুরু। এডিসিপি-র দাবি, “রাজেশই নিজের বাকিদের জড়ো করেছিল। সেই মূল অভিযুক্ত।” ধৃত ১১ জনের মধ্যে দশম শ্রেণিতে পড়া এক কিশোর ছাড়া সকলেই স্থানীয় একটি ছাপাখানার ঠিকাকর্মী। তার মধ্যে রাজেশ যেমন আছে, ঠিকাদার সুনীল কোড়াকেও ধরা হয়েছে। |
আদালতের পথে রাজেশ। নিজস্ব চিত্র |
অভিযোগকারিণী পুলিশকে জানান, তিনি আসানসোলের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার। সেখান থেকেই এক চিকিৎসকের গাড়িতে তিনি সিটি সেন্টারের প্রান্তে পিয়ালা কালীবাড়ি এলাকায় পৌঁছন। সেখানে তাঁর স্বামী মোটরবাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বাড়ি রওনা হওয়ার আগে রাস্তার পাশে গাছের আড়ালে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলে কয়েক জন তাঁর উপরে চড়াও হয়। আগেই ৩ জনকে জঙ্গলের পথে মোটরবাইকে আসতে দেখেন তাঁর স্বামী। বিপদ আঁচ করলেও কিছু করে ওঠার আগেই আরও আট-দশ জন এসে তাঁকে ঘিরে ফেলে।
পুলিশের দাবি, ওই ৩ জনের মধ্যে রাজেশ এক জন। তার নামে আগে লোহাচুরিরও অভিযোগ ছিল। জেরায় সে কবুল করেছে, ছাপাখানার কাজ সেরে আরও দু’জনের সঙ্গে মোটরবাইকে সে পিয়ালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল। পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে তরুণীকে দেখে ফোন করে অন্যদের ডাকে। রাজেশের ফোন পেয়ে তারাও এসে জড়ো হয়ে যায়। তরুণী সাড়ে ১২টা নাগাদ পিয়ালা এলাকায় পৌঁছেছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানালেও পুলিশের দাবি, রাত ১টা থেকে ২টোর মধ্যে ঘটনাটি ঘটে বলে জেরায় রাজেশ জানায়। স্বামী-স্ত্রীর মোবাইল ছিনতাই করে যুবকেরা পালায়। সেই মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখেই পুলিশ পিয়ালা গ্রামের সন্ধান পায়।
সোমবার সন্ধ্যাতেই রাজেশকে জেরা করা হয়েছিল। রাতে ছাপাখানা থেকে বেরনোর সময়ে পুলিশ ন’জনকে ধরে। ঠিকাদার সুনীল কোড়া ছাড়াও তার নিয়োগ করা প্রকাশ কোড়া, সুনীল কোড়া ওরফে সোনা, সুজিত কোড়া, সুরেশ কোড়া, পাপ্পু সিংহ, মুকেশ ওরাং, বুধন বাউড়ি ও অসিত দাস ধরা পড়ে। মঙ্গলবার ভোরে পিয়ালা গ্রাম থেকে ধরা হয় দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে। এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “পুলিশের ভয়ে রাজেশ পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। বাড়ি ফিরতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।” এখনও পর্যন্ত কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি। |