পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
বধূ নির্যাতনের মামলায় তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ
ধূ নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েও নানা মহলের চাপে পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডুয়ার্সের বীরপাড়া থানা এলাকার ঘটনা। অভিযোগকারিণীর নাম সোনাল অগ্রবাল। তাঁর বাপের বাড়ি দার্জিলিং জেলা সদরে। সোনালদেবীর অভিযোগ, তিনি গত ২৬ জুলাই বীরপাড়ায় থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সোনালদেবীর অভিযোগ, টাকা নিয়ে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, ব্যবসায়ী মহলের একাংশের পক্ষ থেকেও নানা ভাবে পুলিশের একাংশকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে বলে সোনালদেবী ও তাঁর পরিজনের আশঙ্কা। পক্ষান্তরে, সোনালদেবীর স্বামী মণীশ অগ্রবালের বাড়ির লোকজন, আত্মীয়দের অনেকেরই দাবি, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমতাবস্থায়, সোনালদেবীর পরিবারের তরফে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির সদ্য নিযুক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পুলিশ কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না। আইন আইনের পথে চলে। আমি ওই মামলার ব্যাপারে বীরপাড়া থানার কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে তা দেখব। তার পরে পদক্ষেপ করব।” পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১১-র জুলাই মাসে সোনালের সঙ্গে বীরপাড়ার মণীশ অগ্রবালের হিন্দু মতে বিয়ে হয়। সোনালদেবীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী মণীশ ও পরিবারের লোকজন মিলে বিয়ের পর থেকে তাঁর উপরে নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন। স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক জেনে ফেলা ও দাবি মতো ২০ লক্ষ টাকা পণ দিতে না-পারায় তাঁর উপরে অত্যাচার চলেছে বলেও সোনালদেবীর অভিযোগ। সোনালদেবীর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই নানা মহল থেকে চাপ আসতে থাকে।
এমনকী, ওই দাম্পত্য বিরোধ মেটাতে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার, রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যা তথা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবালও আসরে নামেন। ওই দম্পতিকে নিয়ে মহিলা কমিশনের সদস্যার চার্চ রোডের অফিসে মিটমাটের চেষ্টাও হয়। সেখানে কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার পরে দম্পতি বীরপাড়ায় ফিরে যান। বিধায়ক শঙ্করবাবু বলেন, “জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে আমাদের কাছে বধূর স্বামীর পরিবারের লোকজন এসে মধ্যস্থতা করানোর জন্য অনুরোধ করেন। তখন মহিলা কমিশনের সদস্যার অফিসে আলোচনায় বসা হয়। একটা সংসার ভেঙে যাক তা কারও কাম্য হতে পারে না। সে জন্য একটা চেষ্টা করেছিলাম। এখন যখন বধূ নির্যাতনের মামলা হয়েছে। তখন পুলিশকে আইন মেনে ব্যবস্থা নিতে হবে।” কমিশনের সদস্য জ্যোৎস্না দেবীর বক্তব্য, “আমরা দু’জনকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। পরে ফের গোলমাল হল। এখন আইন আইনের পথে চলবে।”
সোনালদেবীর অভিযোগ, মামলা দায়েরের পরে তাঁর স্বামী মণীশবাবু শিলিগুড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি বেসরকারি আবাসন কমপ্লেক্সে মণীশবাবু বসবাস করছেন বলে সোনালদেবীর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ। নেতা ও একাধিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর চাপেই মণীশবাবুকে ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বীরপাড়া থানার ওসি সমীর দেওসার দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন মানে মণীশের বৃদ্ধ বাবা-মা হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছেন। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে ওসির দাবি। তবে থানার একাদিক অফিসার জানান, ওই মামলা নিয়ে নানা মহল থেকে নিয়মিত খবরাখবর নেওয়া হচ্ছে। এক অফিসার জানান, প্রভাবশালী নেতা-কর্তাদের একাংশ যে ভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন, তাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না-জানিয়ে ওই মামলায় কোনও পদক্ষেপ করার পক্ষপাতি তাঁরা নন। আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, “বধূ নির্যাতনের মামলা হলে অভিযুক্ত গ্রেফতার হবে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের দরকার পড়ে না। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”
এ দিকে, অভিযুক্ত মনীশবাবুদের আইনজীবি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা যে ভিত্তিহীন সেটা আদালতেই প্রমাণ হয়ে যাবে। তবে ওই মামলার দুজন জামিন পেয়েছেন। বাকিদের জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে বিষয়টি এখন হাইকোর্টের বিচারাধীন।” পাশাপাশি, পুলিশের উপরে তাঁর মক্কেলদের তরফে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে সৈকতবাবুর দাবি।

(সহ প্রতিবেদন: নিলয় দাস)।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.