|
|
|
|
মারধরের অভিযোগ |
পুলিশের হাতে হোম-ছুট ১০ কিশোরী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
একই দিনে তিন বার মেয়েদের একটি হোম থেকে পালানোর চেষ্টা করল আবাসিক কিশোরীরা। প্রথম বার তারা ধরা পড়ে পুলিশের হাত ঘুরে হোমে ফিরতে তাদের উপরে নির্যাতন আরও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফেবার আবার পালানোর চেষ্টা করে কয়েকজন। সে বারও ধরা পড়ে যায় হাতেনাতেই। নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। তখন আবার গভীর রাতে ফের পালায় ১১ জন। তাদেরও দশ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তাদের আর ওই হোমে পাঠানো হয়নি। বাকি এক জন এখনও নিখোঁজ।
জলপাইগুড়ির সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেগুনটারি হোমে শনিবার এই ঘটনার পরে রবিবার রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “খবর শুনেছি। কালই তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। ওই হোমের যাদের বিরুদ্ধে ওই মেয়েরা অভিযোগ করেছে, তা যদি তদন্তে সত্যি প্রমাণিত হয়, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সম্প্রতি হুগলির গুড়াপে একটি হোমের এক মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিক যুবতীর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। ওই হোমের আবাসিকদের উপরে নানা ভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সব আবাসিককে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় হোমটি। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন হোমের পরিবেশ যে তেমন বদলায়নি তারই প্রমাণ বেগুনটারি। এই হোমেও আবাসিক মেয়েদের মারধর ও মানসিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল সেখানকার কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে।
বেগুনটারির ‘নিজলয়’ নামে ওই হোম থেকে দফায় দফায় কয়েক জন কিশোরী পালানোর চেষ্টা করে। প্রথম দফায় তিন জনকে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্ধ্যায় ফের কয়েক জন পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে যায় হোমেই। তবে এরপরও রাত ২টো নাগাদ ফের ১১ জন কিশোরী হোম থেকে পালায়। রবিবার সকালে মহামায়া পাড়া এলাকা থেকে তাদের ১০ জনকে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এক জনের রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওই কিশোরীরা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছে, তুচ্ছ কারণে হোমের কর্মীরা তাদের নিয়মিত মারধর করে। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হয় না। ওই ১০ জনকে শহরের ক্লাব রোড এলাকার অন্য একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হোম কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে।
ওই হোমে ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা থাকে। মোট ৪৭ জন আবাসিক রয়েছে বলে হোম সূত্রে খবর। এ দিন উদ্ধারের পরে থানায় এক কিশোরী বলে, “রাতে গাদাগাদি করে শুতে দেওয়া হয়। পেট ভরে খেতে দেওয়া হয় না। একদিন খিদের কথা বলায় আমার চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে দেয় হোমের এক কর্মী। তার পর থেকে ভয়ে আর কিছু বলি না।” আর এক কিশোরীর কথায়, “প্রতিদিন মারধর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। মশারি গুঁজতে দেরি হলেও চড় খেতে হত। তাই শনিবার সকলে ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমরা পালাই।”
পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “আমি নিজে কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী হোম পরিচালিত হয় কি না, তা দেখা হবে। আপাতত হোমের লাইসেন্স সাময়িক প্রত্যাহারের আর্জি জানানো হবে। উদ্ধার হওয়া ১০ কিশোরীকে অন্য হোমে পাঠানো হয়েছে।” কিশোরীদের মুখে সব অভিযোগ শোনার পরে পুলিশ সুপার বিভিন্ন সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হোমগুলিতে নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যদের থানায় ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। ওই সমিতির সদস্য শঙ্কর দাস বলেন, “আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছি। জেলাশাসককে সব অভিযোগ জানানো হবে।”
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপার কুমকুম দাস হাসপাতালে ভর্তি। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোম পরিচালনা করে, সেই সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক শিখা মিত্র বলেন, “যে অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত খবর নেব। কারও প্ররোচনায় আবাসিকরা এমন করছে কি না, দেখতে হবে।”
সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে আনন্দমঠ সরকারি হোম থেকেও আবাসিক কিছু কিশোরী-তরুণী প্রকাশ্যে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তারপরে প্রশাসনের টনক নড়ে। প্রশাসনের কর্তারা তারপরে বারবার সেই হোমে গিয়েছেন। সম্প্রতি মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী নদিয়ার কয়েকটি হোমে পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে রানাঘাটের একটি বেসরকারি হোমে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কৃষ্ণনগরের একটি সরকারি হোমকে তিনি পুরোপুরি বন্ধই করে দেওয়া হবে বলে সেখানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। শহরের আর একটি হোমে গিয়ে তিনি সুপারকে বদলির নির্দেশ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। |
|
|
|
|
|