গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুলের চৌকাঠ মাড়ানোর সৌভাগ্য হয়নি মালদার প্রত্যন্ত এক গ্রামের গৃহবধূ বেগমা আসমার। কিন্তু বাড়ির অন্দরমহলে বসেই পড়ে ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের একের পর এক উপন্যাস। তিনি স্বপ্ন দেখতেন রক্ষণশীলতার বেড়াজাল টপকে মুসলিম মেয়েরা একদিন উচ্চশিক্ষা লাভ করবে। অযুত-নিযুত প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে পড়িয়েছেন নিজের ছেলে মেয়েদের। তাঁরই মেজো ছেলে খাদিমুল ইসলাম নদিয়ার চাপড়ার একেবারে সীমান্ত সংলগ্ন হাটখোলা হাই মাদ্রাসার ( উচ্চ মাধ্যমিক ) প্রধান শিক্ষক। এ বছর শিক্ষক দিবসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পেয়েছেন। আর সেই পুরস্কারের ২৫ হাজার টাকা তিনি তুলে দিয়েছেন মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির হাতে। ঠিক হয়েছে ওই টাকার বাৎসরিক সুদের অর্থ তুলে দেওয়া হবে উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক ছাত্রীর হাতে। এই ছাত্রী বৃত্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেগম আসমা মেমোরিয়াল স্টাইপেন্ড’।
কিন্তু কেন এই বৃত্তি কেবল কোনও ছাত্রীকেই দেওয়া হবে?
কেনই বা মায়ের নামে এই স্কলারশিপের নামকরণ?
খাদিমুল ইসলাম বলেন, “মা চাইতেন মুসলিম মেয়েরা মূল স্রোতে ফিরুক। উচ্চশিক্ষা লাভ করুক। তিনি গ্রামের মেয়েদের পইপই করে পড়াশুনা করার কথা বলতেন। সীমান্তের এই গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়া করার আগ্রহ দেখে আজ মায়ের কথা মনে পড়ছে ভীষনভাবে। মনে হচ্ছে মা তো আজীবন এটাই চেয়েছিলেন। তাই শিক্ষানুরাগী মায়ের স্মৃতিতে এই স্কলারশিপের অর্থ মেয়েদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে।” দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সীমান্তের এই হাই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন খাদিমুল ইসলাম। শিক্ষক হিসেবে এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়ও তিনি। মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সদস্য মহম্মদ আলি মোল্লা বলেন, “ স্কুলের উন্নতির ব্যাপারে খাদিমুল ইসলাম খুবই আন্তরিক। তিনি ‘শিক্ষারত্ন’ পাওয়ায় আমরা সকলেই খুশি। পুলস্কারের টাকা থেকে যে স্কলারশিপ দেওয়ার কথা উনি বলেছেন তাতে স্কুলের ছাত্রীরা পড়াশুনাতে আরও বেশি করে উৎসাহিত হবে।” |