জর্জ টেলিগ্রাফ-২ (শিলাদিত্য, ওকোরোগর-পেনাল্টি)
প্রয়াগ ইউনাইটেড-৩ (র্যান্টি-২, কার্লোস) |
রেল দুর্ঘটনার ‘মর্মান্তিক স্মৃতি’ ভুলে ফের স্বমহিমায় প্রয়াগ ইউনাইটেড। ইস্টার্ন রেলের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের রহস্য-ফাঁদে যে শুধু অঘটনের গন্ধই লেপ্টে ছিল, সেটা রবিবার যুবভারতীতে বুঝিয়ে দিলেন র্যান্টি মার্টিন্সরা।
জোড়া গোলের ভরপুর নেশা। প্রথম ম্যাচের পরে কলকাতা লিগে জর্জের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক র্যান্টি। বিদ্যুৎ-গতি আর দুরন্ত টার্নিংয়ের অঘোষিত মহানায়ক তো ছিলেনই। জামা-কাপড়ের বাক্সে পুরে গোয়া থেকে কলকাতায় বাড়তি এনেছেন তাঁর গুরুমন্ত্র। পুরোনো কোচ আর্মান্দো কোলাসোর অমূল্য পরামর্শ, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলো। হার-জিত নিয়ে ভেবো না।’ যে মন্ত্র প্রয়াগের তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন র্যান্টি। এ দিন ম্যাচ শেষে যুবভারতীর টানেল দিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে নাইজিরিয়ান গোলমেশিন বলছিলেন, “আমাদের দলে বেশির ভাগ ফুটবলারই নতুন। একটু সময় লাগছে একটা দল হয়ে উঠতে। আমার বিশ্বাস, ফেড কাপের আগে সব ঠিক হয়ে যাবে। ছেলেদের মধ্যে শেখার তাগিদ আছে।” |
দ্বিতীয় গোলের পথে র্যান্টি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ফেড কাপের আগে কতটা তৈরি তারকাখচিত প্রয়াগ, সে দিকে চোখ বোলানো যাক। ‘গুরু’ র্যান্টি মাঠের ভেতরে অনবদ্য। দু’টো চোখ ধাঁধানো গোল করেও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। যেন গোল করাটাই তাঁর কাজ। তা নিয়ে নাচানাচির কী আছে! সাদামাঠা ভঙ্গিতে গ্যালারির দিকে একবার শুধু হাত নাড়লেন। বরং জর্জের বিরুদ্ধে প্রথমেই তাঁর দল গোল খাওয়ার পরে র্যান্টির ভয়ঙ্কর মূর্তি বেশি তাৎপর্যের। ম্যাচের বয়স তখন ৩৪ মিনিট। বক্সের মধ্য থেকে শিলাদিত্যের জোরালো শট সংগ্রামের হাত ফস্কে ঢুকে যায় প্রয়াগের জালে। ব্যস, আর কী! নিমেষের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে যে ভাবে পাল্টা আক্রমণের ঝড় তুললেন র্যান্টি, তাতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল জর্জের ডিফেন্স।
দু’মিনিটও গড়াল না। তুলুঙ্গার থ্রু থেকে র্যান্টি যখন বল ধরছেন, তখন তাঁর কাঁধের দু’পাশে জর্জের দুই ডিফেন্ডার নিশ্বাস ফেলছেন। তাতে কী? দিব্যি তাঁদের নাচিয়ে নিঁখুত নিশানায় জালে বল ঢোকালেন। বিরতির আগেই ২-১ করে রাখলেন। ফের তুলুঙ্গার বাঁ দিক থেকে ভাসানো বল গোলের ঠিকানা খুঁজে নিল র্যান্টির সাপের ছোবলের মতো হেডে। শুধু মন্দ ভাগ্যের দোষে হ্যাটট্রিক হল না। বিরতির পরে র্যান্টির একটা শট আর একটা হেড পোস্টে লাগল। কোনও সন্দেহ নেই, র্যান্টি ফিরতেই ছন্দে ফিরল প্রয়াগ।
আবার মহাতারকাদের খোঁচালে কী ধরনের বিপদ আসতে পারে, সেই কাহিনিও আছে প্রয়াগের এ দিনের ফুটবলে। কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্ডেজের হয়তো র্যান্টির মতো বিদ্যুৎ-গতি কিংবা বল নিয়ে দ্রুত টার্নিং নেই। কিন্তু রবিবার প্রায় তিরিশ গজ থেকে কাঁটা-কম্পাসে মাপা শটে যে গোলটি কার্লোস করলেন, তা দেখে স্বয়ং র্যান্টির ব্যাখ্যা, “এই হল বিশ্বমানের গোল। এটা বিশ্বকাপারই পারে।” কার্লোসের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের বাতিল বিদেশি অ্যালান গাওয়ের অনেক মিল আছে। ছটফটে-পরিশ্রমী না হলেও, ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট বলা যেতেই পারে। ফাঁকা জায়গায় খেলতে পছন্দ করেন। প্রধান শক্তি নিখুঁত পাসিং। প্রয়াগ কোচ সঞ্জয় সেনের বিশ্বাস, “যত সময় এগোবে, কার্লোস এখানকার ফুটবলের সঙ্গে আরও মানিয়ে নেবে। ফিটনেসেরও তুঙ্গে উঠবে। ফেড কাপেই হয়তো ওকে নিজের সেরা ফর্মে পাওয়া যাবে।”
র্যান্টি-হার্নান্ডেজ তাণ্ডবের মধ্যেই অবশ্য প্রয়াগের খেলায় কিছু ফাঁকফোকরও বেরিয়ে পড়ছে। যেমন অগোছালো রক্ষণ। চোট সারিয়ে বেলো রাজাক ম্যাচে ফিরলেও, এখনও অধিনায়ক দীপক মণ্ডল-রাবিন্দরদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট। এ দিন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই জর্জের দ্বিতীয় গোল করে যান নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার ওকোরোগর। গোলটা পেনাল্টি থেকে হলেও বক্সের মধ্যে ফাউল বেলোর ব্যর্থতাতেই আদায় করে নেন জর্জ স্ট্রাইকার।
কিন্তু প্রয়াগে যে গোলের বুটজোড়া নিয়ে তৈরি র্যান্টি-হার্নান্ডেজ! এখন দেখার, ফেড কাপে সর্বভারতীয় বড় টিমগুলোর কাছেও ব্যথা হয়ে উঠতে পারেন কি না কলকাতা ফুটবলের নতুন বিদেশি জুটি। |