যুক্তরাষ্ট্র ওপেন টানা পঞ্চম বছর তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল। সেই সেপ্টেম্বরের এই সময় নিউ ইয়র্কের আচমকা বৃষ্টি আর ঝড়ই কারণ। যা গত চার বছরে প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। যার ধাক্কায় সংগঠকেরা এ বারই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, পরের বছর থেকে ফ্লাশিং মেডোয় সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের মধ্যে একটা দিন বিরতি রাখা হবে। যাতে প্রয়োজনে বিরতির দিনটায় অসমাপ্ত ম্যাচ ফেলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরুষ সিঙ্গলস সেমিফাইনাল শনিবারের বদলে এক দিন আগে শুক্রবারই হয়ে যাবে। কিংবা পুরুষ সিঙ্গলস ফাইনাল নিয়মমাফিকই টুর্নামেন্টের তৃতীয় সোমবার করা হবে।
এ বারও যা হচ্ছে। গত চার বছরের মতোই। কারণ শনিবার অ্যান্ডি মারে প্রথম সেমিফাইনালে টমাস বার্ডিচকে ৫-৭, ৬-২, ৬-১, ৭-৬ (৯-৭) হারানোর পরে জকোভিচ বনাম ডেভিড ফেরার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল প্রথম সেট চলাকালীনই খারাপ আবহাওয়ার জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। জকোভিচ ২-৫ পিছিয়ে থেকে রবিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে নেমে অবশ্য পরের তিন সেটে প্রতিদ্বন্দ্বীকে উড়িয়ে দেন। ২-৬, ৬-১, ৬-৪, ৬-২। সেরেনা বনাম আজারেঙ্কা মেয়েদের সিঙ্গলস ফাইনাল ভারতীয় সময় রবিবার রাত দুটোয় শুরু। আর মারে বনাম জকোভিচ ফাইনাল সোমবার। |
দর্শক শন কনারির সঙ্গে মারে। ফ্লাশিং মেডোয়। |
যদিও টেনিসমহলে প্রশ্ন উঠছে, অস্ট্রেলীয় ওপেন, এমনকী ঐতিহ্যশালী উইম্বলডনে পর্যন্ত যখন সেন্টার কোর্টের উপর আচ্ছাদন বসে গেছে, তখন অত্যাধুনিক যুক্তরাষ্ট্র ওপেন এখনও মূল স্টেডিয়ামের আকাশ উন্মুক্ত রেখে দিয়েছে কেন? আরও প্রশ্ন, পুরুষ সিঙ্গলস ফাইনাল রবিবার নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও কেন তার মাত্র এক দিন আগে শনিবার দুটো সেমিফাইনালই খেলানো হয় এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে? যা বাকি তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে দেখা যায় না।
যার জবাবে অসহায় সংগঠকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করা ছাড়া অন্য রাস্তা নেই। এবং তাঁরা সেটাই করেছেন। যুক্তি দেখানো হয়েছে, গত কাল মারে-বার্ডিচ সেমিফাইনাল চলাকালীন এক বার ঘণ্টায় ২০ মাইল বেগে হাওয়া দিতেই কোর্টের ধারে প্লেয়ারদের বিশ্রামের জন্য রাখা চেয়ারের মধ্যে একটা উড়ে গিয়ে খানিকটা দূরে পড়েছিল। একবার মারের টুপি ঝোড়ো হাওয়ায় খুলে গিয়ে কোর্টের মধ্যে উড়ছিল। ম্যাচ শেষে বিস্মিত মারে বলেছেন, “আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্য যে, ব্যাপারটা বেশিক্ষণ চলেনি। কিন্তু সত্যিই, কী প্রচণ্ড হাওয়াটাই বইছে এখন ফ্লাশিং মেডোয়! যেটাকে এক-এক সময় নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল। আমার পক্ষে বর্ণনার অতীত। তিন ঘণ্টা আটান্ন মিনিটের ম্যারাথন ম্যাচে প্রত্যেকটা পয়েন্টে বল নিয়ন্ত্রণে বাড়তি নজর রাখতে হচ্ছিল। জীবনের অন্যতম কঠিন পরিবেশের মধ্যে খেলে জিতলাম। এটা আরও বলছি কারণ, আমি স্কটল্যান্ড থেকে এসেছি। যে জন্য আমার মন্তব্যটা আরও বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত।”
মারের সাংবাদিক সম্মেলনে দু’জন বিশিষ্ট তারকা হাজির ছিলেন। স্যর আলেক্স ফার্গুসন এবং স্যর শন কনারি। ম্যান ইউ বস বলেন, “আজ আমরা নতুন ঝড় আবিষ্কার করলাম। স্কটিশ ঝড়।” আর ‘জেমস বন্ড’ কনারি বলেন, “স্কটল্যান্ড পৃথিবী জয় করল।” প্রত্যুত্তরে মারে মন্তব্য করেন, “ওঁদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা দারুণ ব্যাপার। শুনলাম ওঁরা ফাইনাল দেখতে এসেছেন। আশা করি আমার দুই বিশিষ্ট সমর্থককে ফাইনালেও আনন্দ দিতে পারব।”
মারের ব্যক্তিগত কোচ, বিখ্যাত প্রাক্তন টেনিস তারকা ইভান লেন্ডলও আশাবাদী, পঞ্চম ফাইনালে মারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জেতার শিকে ছিঁড়বে। “উইম্বলডন ফাইনালে হারের থেকে অ্যান্ডি অনেক কঠিন শিক্ষা পেয়েছে। তার পরই অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয়। এ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যও তৈরি। তা ছাড়া মনে রাখতে হবে, আগের চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালের তিনটেতে ফেডেরার আর অন্যটায় জকোভিচের কাছে হেরেছে অ্যান্ডি। আমিও দু’বার করে বিয়র্ন বর্গ আর জিমি কোনর্স এবং একবার ম্যাটস ভিল্যান্ডারের কাছে হারার পর ১৯৮৪-তে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলাম রোলাঁ গারোয়। তার পরে আরও সাতটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতি। মারে হারলেও ওর শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে যে ভাবে চাপ সামলেছিল, আমি নিশ্চিত সেখান থেকেই ও পরের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার আত্মবিশ্বাস, রসদ ও শক্তি পেয়েছে। ফ্লাশিং মেডো থেকে অ্যান্ডি মনে হয় খালি হাতে ফিরবে না।” |