|
|
|
|
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রেলশহরে, উদ্বেগও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
চুরি-ছিনতাই হতই। কিন্তু গণধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি। তা-ও আবার অভিযুক্তেরা কেউ বহিরাগত নয়। এলাকারই ছেলে। রাতও এমন কিছু হয়নি তখন। সবে সন্ধে পেরিয়েছে। মথুরাকাটিতে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘিরে ফের ঠুনকো নিরাপত্তার ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠল রেলশহর খড়্গপুরে।
এক সময় খড়্গপুরের বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের ‘দাপট’ ছিল চোখে পড়ার মতো। হামেশাই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। দিনেদুপুরে সমাজবিরোধীদের ‘উপদ্রব’ চলত। পরে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গত কয়েক মাস ধরে ফের ওই সব এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডাকাতদের গুলিতে খরিদায় সঞ্জয় সাহু নামে এক যুবক খুন হন। ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে ওই যুবককে গুলি করে খুন করে একদল দুষ্কৃতী। তার কয়েক মাস আগে রীতা সাউ নামে এক মহিলা দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন। মাস দু’য়েক আগে খুন হয়েছেন রাধেশ্যাম গুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ী। একের পর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামনে এসেছে রেলশহরের নিরাপত্তার বিষয়টি।
ফের কী সেই ‘কালো’ দিন ফিরতে
শুরু করেছে রেলশহরে?
প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে শহরের মধ্যেই। ‘শাসকদল’ তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “পুলিশের একাংশ দুষ্কৃতীদের জায়গা করে দিচ্ছে। রাজ্য সরকারকে হেয় করতেই তাদের এই কৌশল। স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হল। এটা জঘন্যতম অপরাধ। পুলিশের উচিত অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা।” রবিবার নিরাপত্তা নিয়ে খড়্গপুর টাউন থানায় বিক্ষোভও দেখান এলাকাবাসী। তৃণমূলের শহর সভাপতি সেই বিক্ষোভে ছিলেন। তাঁর কথায়, “এলাকার মানুষ অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গেই থানায় গিয়েছিলাম।” শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসেরও বক্তব্য, “শহরের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। না-হলে উদ্বেগ আরও বাড়বে।”
খড়্গপুর শহরে নানা ভাষাভাষি মানুষের বাস। ফলে, অন্য শহরের সঙ্গে এই শহরের পরিবেশ-পরিস্থিতির পার্থক্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর উদ্বেগ স্বাভাবিক বলে মানছেন চেম্বার অফ কর্মাসের সাধারণ সম্পাদক রাজা রায়ও। তিনি বলেন, “শহরের বুকে এমন ঘটনা ভাবা যায় না। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না-করলে দুষ্কৃতীরা উৎসাহিত হবে।”
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ‘কম সময়ের’ মধ্যে তদন্ত এগিয়েছে। দ্রুত ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে। দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করতেও বেশ কিছুটা সময় লাগে। তবে এ ক্ষেত্রে দ্রুতই পদক্ষেপ করা হয়েছে।” ঘটনার তদন্তে খড়্গপুরে এসে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহেরও আশ্বাস, “শহরবাসীর উদ্বেগের কিছু নেই। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। নিরাপত্তার দিকটি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।” তবে পুলিশের এই আশ্বাসে উদ্বেগ কাটছে না রেলশহরে। খোদ খড়্গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পালের বক্তব্য, “অভিযুক্তরা কেউ বহিরাগত নয়। বাইরে থেকে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলে শহরেই থাকে। চিন্তার বিষয় সেটাই। এমন ঘটনা এড়াতে পুলিশের তৎপরতা জরুরি।”
এ দিকে, খড়্গপুরের রাস্তায় পথবাতির সংখ্যা কম হওয়ায় অসামাজিক কার্যকলাপের প্রবণতা বেশি বলে শহরবাসীর একাংশের মত। সন্ধ্যা হলেই খরিদা, মথুরাকাটি প্রভৃতি এলাকায় দুষ্টচক্রের সঙ্গে জড়িতদের আনাগোনা বাড়ে। শনিবার রাতে যেখানে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে, সেই মথুরাকাটিতে পথবাতির সংখ্যা কম বলে মানছেন পুরপ্রধানও। তবে তাঁর বক্তব্য, “ওই এলাকা রেলের। পুরসভা এলাকায় পর্যাপ্ত পথবাতি রয়েছে। রেল এলাকার সব জায়গায় পর্যাপ্ত পথবাতি নেই। এখানে আরও বেশি সংখ্যায় পথবাতি থাকলে ভাল হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি আগেও রেল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ফের বলব।”
গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন খড়্গপুর টাউন থানায় ডেপুটেশন দিয়েছে সিপিএমের মহিলা সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’ও। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের শহর জোনাল সম্পাদিকা স্মৃতিকণা দেবনাথ, সভানেত্রী লুসি নায়েক প্রমুখ। শহরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে আরও ‘তৎপর’ হতে হবে বলে দাবি করেছে সমিতি। |
|
|
|
|
|