বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্মিসভা ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল আরামবাগ মহকুমা জুড়ে। রবিবার বড়সড় গণ্ডগোল এড়ানো গেলেও ‘সৌজন্যের রাজনীতি’ অধরাই থেকে গেল।
এ দিন সকাল ৮টা থেকে খানাকুল, পুড়শুড়া এবং আরামবাগ বিধানসভা এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আরামবাগ রবীন্দ্রভবনের সামনে (এখানেই পরে এসে পৌঁছন বুদ্ধবাবু) জমায়েত হতে শুরু করেন। বেলা ১২টা নাগাদ তৃণমূলের লোকজনের ভিড়েই রবীন্দ্রভবনের সামনের রাস্তার অর্ধেক কার্যত ‘দখল’ করে নেন। তখনও পর্যন্ত জনা কুড়ি পুলিশ কর্মীকে দেখা গিয়েছিল এলাকায়।
অন্য দিকে, সিপিএম নেতাদের কাছে তখন খবর আসছিল, গোঘাটের মদিনা এবং বেঙ্গাইতে বাস তল্লাশি করে বাস থেকে সিপিএম কর্মীদের নামিয়ে দিচ্ছে তৃণমূলের লোকজন। সিপিএম নেতারা ওই সব দলীয় কর্মীদের বার্তা পাঠান, বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। আরামবাগের তিরোল অঞ্চলে গোরপুকুর এবং বাইশ মাইলে তৃণমূল রীতিমতো ‘ক্যাম্প’ করে সিপিএমের লোকজনকে সভায় আসতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। খানাকুলের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বংশীবদন মৈত্র জানান, এ সব সমস্যার জন্য তাঁকেও অনেক ঘুরপথে সভায় পৌঁছতে হয়েছে। আরামবাগের মলয়পুর, বড়ডোঙ্গল, তিরোলে বেশ কয়েক জন সিপিএম কর্মীকে চড়থাপ্পর মারার অভিযোগ আছে। এ দিনের সভার তত্ত্বাবধানে থাকা আরামবাগের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিনয় দত্ত বলেন, “তৃণমূলের হুমকি, বাধা সত্ত্বেও প্রায় আড়াই হাজার কর্মী এসেছেন।” |
এ দিকে, আরামবাগের গৌরহাটি মোড়ে সকাল থেকে রক্তদান শিবির, শিশুদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা এবং নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখান থেকে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা দলের কর্মীদের উদ্দেশে বার বার বলছিলেন, “সিপিএম ফের রক্ত ঝরাতে চাইছে। তারই প্রতিবাদে আমাদের রক্তদান শিবির। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা নিয়েই আরামবাগে আসুন, দিদির নির্দেশ, আপনারা সংযত থাকবেন। সৌজন্য দেখাবেন।” যদিও তৃণমূলের ওই শিবিরের মাত্র কয়েক হাত দূরেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের একটি পার্টি অফিসে তত ক্ষণে লাল পতাকা নামিয়ে সেখানে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছে অতুৎসাহী কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তৃণমূলের পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানারে প্রায় মুড়ে দেওয়া হয় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়টি। যদিও তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপেই বিষয়টি নিয়ে জল গড়ানোর আগে সেই সব পতাকা, ফেস্টুন সরিয়ে নেওয়া হয়।
রবীন্দ্রভবনে ঢোকার মুখে বুদ্ধবাবুর উদ্দেশে জমায়েত থেকে কটূক্তি উড়ে আসে। তাঁকে জুতো দেখানো হয়। ছিল কালো পতাকা। কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার বক্তব্য, এ সব সিপিএমের কারসাজি। আমাদের দল ও রাজ্য সরকারকে অপদস্ত করতেই ওরা নিজেরাই এ সব কাণ্ড ঘটিয়েছে।” |