নতুন সরকার ক্ষমতার আসার পরে সংখ্যালঘুদের জন্য ‘গীতাঞ্জলি প্রকল্প’ চালু করেছে। এই প্রকল্পে বিপিএল তালিকায় নাম নেই অথচ দরিদ্র্য পরিবার-পিছু বাড়ি তৈরির খরচ বাবদ ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। প্রকল্পটি চালু করার পরে হাওড়ার আমতা ২ ব্লকে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ৩১ জনের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করতে না-পারায় টাকা আর আসেনি। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ফের ৪৫ জনের নাম চূড়ান্ত করে পাঠাতে বলেছে রাজ্য আবাসন দফতর। তারাই প্রকল্পটিতে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু এখনও প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত না-হওয়ায় এই বরাদ্দও বাতিল হতে বসেছে। গরিব মানুষগুলির এ হেন পরিস্থিতির জন্য সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরস্পরকে দায়ী করেছে।
এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করার কথা বিডিও এবং মহকুমাশাসকের। আমতা ২ পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে সিপিএমের হাতে। বিরোধী দলনেতার পদটি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। আবার আমতা বিধানসভা কেন্দ্রটি রয়েছে কংগ্রেসের হাতে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে এই প্রকল্পে ৪৫ জন প্রাপকের নাম পাঠাতে বলে আবাসন দফতর। নাম চূড়ান্ত করার জন্য বিডিও একটি বৈঠক ডাকলেও তাতে অসিতবাবু আসেননি। ফলে বৈঠক হয়নি।
তৃণমূলের অভিযোগ, কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের অসহযোগিতার জন্যই ‘গীতাঞ্জলি প্রকল্পে’ প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সমিতিতে বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের শেখ খায়রুল বলেন, “বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নিয়ে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করার জন্য বিডিও বৈঠক ডেকেছিলেন। তাতে বিরোধী দলনেতা হিসাবে আমাকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে অসিতবাবু আসেননি। ফলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।”
খায়রুলের আরও অভিযোগ, “বিধায়কের প্রতিনিধিরা বলে বেড়াচ্ছেন বিধায়কের কোটা চাই। সেটা মানা না-হলে বিধায়ক বিডিও-র ডাকা বৈঠকে আসবেন না। আমরা বলেছিলাম, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সমান ভাগ করে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের টাকা দেওয়া হোক। কিন্তু বিধায়ক এবং তাঁর সঙ্গীরা কোটার বাইরে কিছু করতে চাইছেন না। ফলে একবার টাকা ফিরে গিয়েছে। ফের তা ফেরত যেতে বসেছে।”
সমিতিতে বিধায়ক প্রতিনিধি হারুণ রশিদ আবার বলেন, “আমরা কোটার কথা কোথাও বলিনি। আর প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে যদি সমান ভাবে টাকা ভাগ করে দিতে হয়, সেটা তো বৈঠকেই ঠিক করতে হবে। কিন্তু তৃণমূল বৈঠকের বাইরে এই সব কথা বলে বাজার গরম করতে চাইছে।” বিডিও-র ডাকা বৈঠকে বিধায়কের না-আসার যে অভিযোগ তৃণমূল করছে সে বিষয়ে হারুণ বলেন, “একটি মাত্র বৈঠক ডাকা হয়েছিল। ওই তারিখে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থাকায় বিধায়ক আসতে পারেননি। ফের বৈঠক ডাকা হোক।”
অন্য দিকে, অসিতবাবু বলেন, “কোন পদ্ধতিতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে টাকা দেওয়া হয় সেই সব নিয়মকানুন আমি কিছুই জানি না। কোটার কথাও আমি বলিনি। বিডিও-র ডাকা একটি বৈঠকে আমি আসতে পারিনি ঠিকই। তবে আমি বিডিও-র সঙ্গে কথা বলেছি। ফের বৈঠক ডাকার জন্য তাঁকে আমি অনুরোধ করেছি। নিয়ম মেনে সেই বৈঠকে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করা হবে।”
সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতিকে এক হাত নেন তিনি। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত সমিতির অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত না-করার জন্য সমিতির অনেকটা দায় আছে। তারা সেটা অস্বীকার করতে পারে না।”
সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মালবিকা হাজরা বলেন, “গত আর্থিক বছরে আমরাই উদ্যোগ নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে দু’জন করে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করেছিলাম। কিন্তু তালিকায় বিধায়ক সই করেননি। ফলে টাকা ফেরত চলে যায়। এ বারেও নাম চূড়ান্ত করাকে কেন্দ্র করে কী ঘটছে, সকলে তা দেখতে পাচ্ছেন। আমি আর কী বলব!” এ কথা অবশ্য অস্বীকার করেন বিধায়ক।
বিডিও ইন্দ্রকুমার নস্কর বলেন, “কী কারণে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে প্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করা যায়নি তা আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে বিধায়ক যদি বলেন তা-হলে ফের বৈঠক ডাকতে আমার কোনও আপত্তি নেই।” |