|
|
|
|
রেল মানচিত্রে মেঘালয়, বর্ষশেষে অরুণাচলও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
বহু বিতর্ক-বিরোধিতার মেঘ কাটিয়ে শনিবার প্রথমবার রেল মানচিত্রে জায়গা করে নিল মেঘালয়। সব পরিকল্পনামাফিক চললে চলতি বছরের শেষেই অরুণাচলের রাজধানীও রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু, ডিমাপুর থেকে কোহিমা অবধি রেলপথ সম্প্রসারণ বিশ বাঁও জলে।
উত্তর গারো পার্বত্য জেলার মেন্দিপথারে কাল, মেঘালয়ের প্রথম রেল স্টেশনের শিলান্যাস করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী, আমলা, পুলিশকর্তা ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কর্তাব্যক্তিরা।
মেঘালয় চার দশকের ইতিহাসে রেলপথ নিয়ে বিতর্ক চলছে প্রায় ১৮ বছর। তা এখনও থামে নি। ট্রেন চালু হলে রাজ্যে বহিরাগতের সংখ্যা বাড়বে- এমন আশঙ্কায় ছাত্র সংগঠনগুলির একাংশ বরাবরই রেলপথ পাতার বিরুদ্ধে। কিন্তু, রাজ্য সরকার এইবার অনড় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বলেন, “রেলের হাত ধরে রাজ্যের উন্নয়ন অনেকটাই ত্বরান্বিত হবে। যারা বিরোধিতা করছে, তারা নেতিবাচক মনোভাবের শিকার। এ দিন কেবল প্রথম পদক্ষেপ হল। আশা করি আগামী পর্বে দ্রুতরাজ্যের অন্যান্য অংশকেও রেলের আওতায় আনা যাবে।”
প্রথম পর্বে, অসমের দুধনৈ থেকে মেন্দিপথার অবধি ১৯.৪৭ কিলোমিটার লাইন পাততে ১৪৪ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। রাজ্য সরকারের আশা, আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যেই মেন্দিপথারে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। লাইনটি নলবাড়ি- দেউড়িপাড়া, বড়মিয়াপাড়া, ছোটমিয়াড়া, মাতারঙ্গ, মানিকগঞ্জ, হরিণকাটা, বাকেংনাং-তিলাপাড়া হয়ে মেন্দিপথার
পৌঁছবে। ১৯৯৪ সালে গারো পাহাড়ে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। দুধনৈ থেকে ডেপা সারাংমা অবধি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও জনরোষের চাপে তা বাতিল করতে হয়। পরিবহণমন্ত্রী আবু তাহের মণ্ডল জানান, বর্নিহাট থেকে শিলং অবধি রেলপথের অনুমোদনও মিলেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের মধ্যেই, শিলং অবধি ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
মেঘালয়ের মতোই, অরুণাচল প্রদেশও দিন বদলের দিন গুণছে। সব ঠিকঠাক চললে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই হারমোতি থেকে নাহারলাগান অবধি লাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাল রাজভবনে রাজ্যপাল জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জে জে সিংহের সঙ্গে রেললাইন সংক্রান্ত বৈঠকে এই কথা জানান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের উপ মুখ্য ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় কানোজিয়া। তিনি জানান, মোট ২১.৭৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনের মধ্যে ২০ কিলোমিটার লাইন পাতার কাজ শেষ। অসমের উত্তর লখিমপুরের রাঙাপাড়া লাইনের সঙ্গে এই রেলপথটি যুক্ত হবে। প্রয়োজনীয় ১৩৮.৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ৪৬টি ছোট সেতু নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। দুটি স্টেশন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। ১৬টি বড় সেতুর মধ্যে ১০টি তৈরির কাজ শেষ। ৯৫.৬ শতাংশ লাইন পাতা ও ৯১.৯ শতাংশ স্লিপার পাতা হয়ে গিয়েছে। কাজের অগ্রগতিতে খুশি রাজ্যপাল রেল ও রাজ্য সরকারকে সব সময় একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
অরুণাচল ও মেঘালয়ে কাজ এগোলেও ডিমাপুর থেকে কোহিমা অবধি রেললাইন পাতার কাজ ২০০৭ সালে অনুমোদন পেলেও এখনও একটুও এগোয়নি। রাজ্যসভায়, রেলের প্রতিমন্ত্রী ভরতসিংহ সোলাঙ্কি এই কথা জানিয়ে বলেন, “মূলত বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র না মেলার ফলেই এই বিলম্ব।” রেল সূত্রে খবর, ১২৩ কিলোমিটার লম্বা ডিমাপুর-কোহিমা রেলপথের অবস্থানগত সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ভূ-প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষণের কাজ ৭১% শেষ। গত বছর রেলমন্ত্রী নিজে সরেজমিনে রেলপথের কাজ জরিপ করে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিওর সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও রেল সংক্রান্ত নানা বিষয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু, তার পরেও কাজে তেমন গতি আসেনি। প্রয়োজনীয় সব ছাড়পত্র না মেলায় মাটি খোঁড়া, লাইন পাতা, ছোটো-বড় সেতু তৈরির জন্য টেন্ডার এখনও ডাকা সম্ভব হয়নি। |
|
|
|
|
|