দাপাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের দল
অস্ত্র মাদক, বন্ধু বা দম্পতির ভেক ধরেই ট্রেনে লুঠ
পোস্টার, ট্রেনে স্টিকার, সংবাদপত্র-টিভিতে বিজ্ঞাপন, স্টেশনে ঘোষণায় বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু ‘অপরিচিত সহযাত্রী কোনও খাবার বা পানীয় দিলে খাবেন না’, এই সাবধানবাণীতে কাজ বিশেষ হচ্ছে না। রেল পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরেই তাদের হাতে ৪২টি এমন মামলা এসেছে, যেখানে পানীয় বা খাবারের সঙ্গে মাদক খাইয়ে বেঁহুশ করে যাত্রীদের সর্বস্বান্ত করা হয়েছে।
মাদক খাইয়ে লুঠের ঘটনা এত বেড়ে গিয়েছে যে, হাওড়া ও শিয়ালদহের মতো প্রান্তিক স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন এলেই রেল নিরাপত্তা বাহিনী বা আরপিএফের জওয়ানেরা ট্রেনে উঠে দেখে নিচ্ছেন, কোনও যাত্রী অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন কি না। আরপিএফের আইজি সুভাষচন্দ্র সাহু বলেন, “নানা ভাবে যাত্রীদের সচেতন করার পরেও এই ধরনের ঘটনা কমছে না। ২০১১ সালে এই ধরনের ৫৯টি মামলা হয়েছিল। কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের ট্রেনে এখন উত্তরপ্রদেশের দুষ্কৃতীদের একটি দল খুব সক্রিয়।”
রেল সূত্রের খবর, কলকাতার দুষ্কৃতীদের দলটি এখন ‘কাজ’ করছে দিল্লি এলাকায়। নিজেদের এলাকায় দীর্ঘদিন ‘কাজ’ করলে পরিচিত মুখ বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা। তাই দুষ্কৃতীরা মাঝেমধ্যেই এ ভাবে এলাকা বদল করে দুষ্কর্ম চালিয়ে যায়। ‘কাজ’ করার পদ্ধতিতেও অভিনবত্ব আনছে তারা। পুলিশ জানায়, সহৃদয় বন্ধুর ভেক তো আছেই। দুষ্কৃতীরা অনেক ক্ষেত্রে দম্পতি সেজে ট্রেনে উঠছে। তাতে সহযাত্রী হিসেবে বিশ্বাস অর্জন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। তার পরে মওকা বুঝে ‘কুকর্ম’ সেরে চম্পট দিচ্ছে তারা।
গত শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে আরপিএফের হাতে ধরা পড়েছে এক যুবক। জিতেন্দ্র সিংহ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছে সে। পুলিশি সূত্রের খবর, দুই যুবতী দিল্লি থেকে কালকা মেলে ওঠেন। এক জনের বাড়ি পুরুলিয়ায়, অন্য জন কলকাতার বাসিন্দা। দ্বিতীয় শ্রেণির লম্বা আসনের দু’প্রান্তে বসে ছিলেন তাঁরা। কেউ কাউকে চিনতেন না। জিতেন্দ্রের আসন ছিল তাঁদের মাঝখানে। জিতেন্দ্র দু’দিন ধরে দু’জনের সঙ্গে ভাব জমায়। শেষে শুক্রবার ভোরে তার দেওয়া ঠান্ডা পানীয় খেয়ে দুই যুবতীই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। জিতেন্দ্রের কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন এক জন। তাই ওই যুবক বর্ধমানে নামতে পারেনি। হাওড়ায় ট্রেন ঢোকার মুখে আরপিএফের দুই জওয়ান আসেন ওই কামরায়। মহিলাদের আচ্ছন্ন ভাব একটু কাটতেই তাঁরা আরপিএফ-কে সব জানান। বমাল ধরা পড়ে জিতেন্দ্র। ওই যুবকের বাড়িও উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায়। তার কাছে শ’খানেক ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে।
সুভাষবাবু বলেন, “নতুন নতুন কড়া ওষুধ ব্যবহার করছে দুষ্কৃতীরা। ফলে অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকিও থাকছে।” জিতেন্দ্রকে ধরার পরে ওই দুই যুবতীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। চলতি বছরেই এ ভাবে মাদকসেবনে অসুস্থ মারা গিয়েছেন এক ট্রেনযাত্রী। গত বছর একই ভাবে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের।
দুষ্কৃতীদের ধরতে কী করছে রেল?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী জানান, সম্প্রতি লুটেরাদের ছবি আঁকানোর ব্যবস্থা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, হাওড়া বা শিয়ালদহে পৌঁছনোর পরেও যাত্রী অচৈতন্য হয়ে কামরায় পড়ে রয়েছেন। তাঁর মালপত্র হাতিয়ে নেমে গিয়েছে লুটেরা। সমীরবাবু বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই আমরা যাত্রীর চেতনা ফেরার পরে তাঁর বিবরণ শুনে দুষ্কৃতীর ছবি আঁকিয়ে নিচ্ছি। সেই ছবি টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্টেশনে।” সম্প্রতি এমনই ছবি দেখে হাওড়া স্টেশনে চার লুটেরা ধরা পড়েছে আরপিএফের হাতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.