|
|
|
|
সুষমাই যোগ্য, ঠাকরের মন্তব্য বাড়াল বিতর্ক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী কে হবেন, এই নিয়ে সমস্যা কিছু কম ছিল না বিজেপি-তে। সেই বিতর্কের আঁচে এ বার ঘি ঢাললেন বাল ঠাকরে। নাটকীয় ভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী পদে বিজেপি-র যোগ্যতম প্রার্থী হিসেবে সুষমা স্বরাজের নাম প্রস্তাব করলেন তিনি।
বিজেপি-র আশঙ্কা, সংসদের বাদল অধিবেশনে দল এক যোগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেও শিবসেনা-প্রধানের মন্তব্যের জেরে ফের জলঘোলা শুরু হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। এবং সামগ্রিক ভাবে এনডিএ-তেও। যে কারণে তড়িঘড়ি দলের তরফে পুরনো যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে যে, দলের অনেক নেতাই যোগ্য। কিন্তু তাতেই ব্যাপারটা মিটছে না। নরেন্দ্র মোদী কার্যত স্বঘোষিত ভাবেই প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে উঠছেন দেখে জোটের অন্যতম শরিক জেডিইউয়ের নেতা নীতীশ কুমার বেশ কিছু দিন ধরেই সরব। আজ তাঁরই দলের নেতা শরদ যাদব সরব হন এ ভাবে এনডিএ-র সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার প্রতিবাদে। বিরোধী শিবিরে নতুন বিতর্ক মাথা চাড়া দিতে দেখে মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি এ দিন কটাক্ষ ছুড়ে দেন, “এনডিএ শিবিরকে দেখে মনে হচ্ছে তারা জনতার রায়কে উপেক্ষা করে নিজেরাই প্রধানমন্ত্রী পদে কাউকে পারলে বসিয়ে দেয়।”
গত এক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রেখে কয়লা কেলেঙ্কারিতে এক যোগে আক্রমণ শানানোর পরে যখন গোটা বিজেপি শিবিরের ঐক্যবদ্ধ চেহারা ফুটে উঠেছিল ঠিক তখনই কার্যত এই বোমা ফাটালেন শিবসেনা-প্রধান। দলীয় মুখপাত্র সামনা-তে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্যতম প্রার্থী হলেন সুষমা স্বরাজ। আমি আগেও বলেছি, সুষমা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মহিলা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের উন্নতি হবে।”
ঠাকরের মন্তব্যে দলে নেতৃত্ব-সঙ্কট আরও বাড়বে আঁচ করে আজ সকাল থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয় বিজেপি শিবির। দলের মুখপাত্র বলবীর পুঞ্জ বলেন, “আমাদের দলের উপর ভগবানের আশীর্বাদ রয়েছে। বিজেপি পরিবারতান্ত্রিক দল নয়। তাই আমাদের দলে একাধিক নির্ভরযোগ্য নেতা রয়েছেন যাঁরা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।” তবে বিজেপি-র সবচেয়ে পুরনো জোটসঙ্গী শিবসেনার নেতৃত্বকে না চটাতে পুঞ্জ এ-ও বলেন যে, “এনডিএ-র কোনও শরিক যদি কোনও বিজেপি নেতার পক্ষে মুখ খোলেন তা হলে তা অবশ্যই স্বাগত।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঠাকরে কেন হঠাৎ এ ভাবে সুষমার সমর্থনে মুখ খুললেন?
সপ্তাহ দেড়েক আগে মুম্বইয়ে গিয়ে ঠাকরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সুষমা। ঠাকরে ও স্বরাজ পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। বিজেপি নেতাদের অনেকে মনে করছেন, শুধু ভাল সম্পর্কের কারণেই সুষমার হয়ে মুখ খুলেছেন ঠাকরে, এমনটা না-ও হতে পারে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, দলের অন্য নেতাদের যাত্রা ভঙ্গ করতেই পরিকল্পনামাফিক মুখ খুলেছেন শিবসেনা-প্রধান। কেননা, মহারাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঠাকরের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর। দুই মারাঠি নেতার মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে দূরত্ব থাকায় স্বভাবতই ঠাকরে চান না গডকড়ী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হোন। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল নয় ঠাকরের। মোদী প্রধানমন্ত্রী হোন, এটা তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চান না। বর্তমানে মোদী ও নিতিনের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। এই অক্ষের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছেন সুষমা, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা।
দলের একাংশের বক্তব্য, সুষমা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে আপত্তি থাকবে না আডবাণীর। তা ছাড়া বিজেপির বর্ষীয়ান ওই নেতার সঙ্গে নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ রয়েছে ঠাকরের। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “সুষমার নাম উঠে আসার পিছনে বর্ষীয়ান দুই নেতার রসায়ন এক যোগে কাজ করতে পারে।”
তবে আডবাণী এর আগে ‘অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে নীতীশদের উৎসাহ বাড়ালেও, জেডিইউ স্বাভাবিক কারণেই শিবসেনা-প্রধানের মন্তব্যকে ভাল ভাবে নেয়নি। দলের সভাপতি শরদ যাদব আজ এ প্রসঙ্গে বলেন বলেন, “এনডিএ-র প্রার্থী কে হবেন তা এই ভাবে ঘোষণা হয় না। জোটের সব দলের নেতারা বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রশ্নে গত এক-দেড় বছর ধরেই বিবাদ চলছে বিজেপি-তে। ইতিমধ্যেই ওই পদের জন্য মোদী, গডকড়ী, সুষমা, অরুণ জেটলির মতো একাধিক বিজেপি নেতার নাম উঠে এসেছে। কিন্তু এই নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মনোমালিন্য প্রকাশ্যে এসে পড়ায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বিজেপি-র এক নেতার বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে দলকে অক্সিজেন জোগায় কয়লা কেলেঙ্কারি। বহু দিন বাদে দলের যে ঐক্যবদ্ধ ছবি বাদল অধিবেশনে ফুটে উঠেছে তা আবার আজ ঠাকরের মন্তব্যে ধাক্কা খেল।” |
|
|
|
|
|