|
|
|
|
অন্যায় নেই, তাই খনি বণ্টন বাতিলে নারাজ প্রধানমন্ত্রী |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
গত সপ্তাহে কংগ্রেসের তিন শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাব দেন, তিনি যে সমস্ত কয়লা ব্লক বণ্টনের অনুমতি দিয়েছিলেন, সেগুলি খারিজ করে দেওয়া হোক। এই নেতাদের যুক্তি ছিল, ১৯৮৮ সালে প্রেস বিল বাতিলের দাবিতে সংসদ অচল করে রাখেন বিরোধীরা। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী সংসদে নাটকীয় ভাবে বিলটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সংসদের স্বাভাবিক কাজকর্মও শুরু হয়। সেই উদাহরণ টেনে তাঁরা বলেন, বণ্টন খারিজ করে দেওয়া হলে বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়া যাবে। তা না হলে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত তারা কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রচার চালিয়ে যাবে। যাতে ক্ষতি হতে পারে কংগ্রেসের।
এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়লা খনি বণ্টনে অনুমতি দিয়ে কোনও অন্যায় করেছেন বলে তিনি মনে করেন না। মনমোহনের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, যে সময় খনি বণ্টন হয়েছিল, তখন কয়লা মন্ত্রকের ভার ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এখন বণ্টন বাতিল হলে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হবে যে, সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ফলে মনমোহনের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠবে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, মনমোহন কংগ্রেস নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কয়লা খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া নীতিগত ভাবে উচিত কাজ বলেই তিনি মনে করেন। খনি বণ্টনের পরে যদি সেখানে দুর্নীতি হয়ে থাকে, তবে তার পৃথক তদন্ত হওয়া উচিত। এবং ইতিমধ্যেই সিবিআই সেই তদন্ত শুরু করেছে। আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীও এ ব্যাপারে পর্যালোচনা শুরু করেছে। তাদের রিপোর্টে যদি দুর্নীতির কথা জানা যায়, তা হলে তার ভিত্তিতে বণ্টন খারিজ করা হবে।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বিদেশ যাওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কয়লা খনি বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে না। তবে এই খনিগুলি থেকে যাতে আরও বেশি কয়লা তোলা হয়, সে জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বলা হবে। তাদের কাজের মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে খনি পুনর্বণ্টনও করা যেতে পারে।
এখন কংগ্রেসের কৌশল হল, কয়লা-কাণ্ডের তদন্তে বিজেপি-র কোনও নেতা সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে সেগুলি প্রকাশ্যে এনে তাঁদের আক্রমণ করা। ইতিমধ্যেই জয়রাম রমেশ-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সাংসদ অজয় সানচেটি এই দুর্নীতিতে যুক্ত।
পাশাপাশি, বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিও যে খনি বণ্টনের পক্ষেই মত দিয়েছিল, সে কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নিলামে না যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৬-এর ৩১ মার্চ রাজ্যের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় কয়লাসচিবকে চিঠি দিয়ে ওই সুপারিশ করেন। ২০০৫-এর ১১ এপ্রিল রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেও প্রধানমন্ত্রীকে এই ধরনের সুপারিশ করেছিলেন। ২০০২-এর ২২ জুন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জিন্দলদের কয়লা ব্লক দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। ২০০৭-এ অনিল অম্বানীকে কয়লা ব্লক দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
২০০৪ সালে তৎকালীন কয়লাসচিব পি সি পারাখ খনি বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। তাঁর যুক্তি ছিল, খনি নিলাম করা হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পারাখকে জানিয়ে দেন, যে পদ্ধতি চালু রয়েছে, আপাতত তা-ই চলবে। পরে খনি বণ্টনে নতুন আইন করা হয়।
বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির কথায়, “১৯৫৭ সালের কয়লা আইন ২০১০ সালের অগস্ট মাসে পরিবর্তন করে বলা হয়, এখন থেকে কয়লা খনি প্রতিযোগিতামূলক বিডিং-এর মাধ্যমে বণ্টন করা হবে। তার পরেও এক বছর সেই আইন কেন মানা হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলা কি যুক্তিসঙ্গত নয়?”
তবে বিজেপি-ও কিছুটা ধন্দে রয়েছে। দল মনে করছে, কয়লা-প্রশ্নে আক্রমণ শানালে রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়া যাবে। এ নিয়ে সংসদের চলতি বাদল অধিবেশন অচল করে দেওয়া সত্ত্বেও দল সে ভাবে ‘বদনামের’ শিকার হয়নি বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “জনমত সঙ্গে না থাকলে এত দিন সংসদ অচল করে রাখা যেত না।” কিন্তু গোটা বিষয়টিতে দল কতটা আগ্রাসী মনোভাব নেবে, সংশয় সেটা নিয়েই। কেন না ইতিমধ্যেই দলের কিছু নেতার নাম জড়িয়ে গিয়েছে এই কেলেঙ্কারিতে।
সরকারের কাছে আশার ব্যাপার হল, নিজেদের নামে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সে ভাবে সরব হতে চাইছে না সপা-বিএসপি-র নেতারা। তাই সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এই আন্দোলন বিজেপি রাজ্যে-রাজ্যে কতটা ছড়িয়ে দিতে পারে, সেটাই দেখার।
|
|
|
|
|
|