|
|
|
|
নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা, মৃত ৬ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কোলাঘাটের কাছে এক ধাবায় শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত খাওয়াদাওয়ার পরে বড় একটি গাড়িতে চেপে কলকাতায় ফিরছিলেন ওঁরা। রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ হাওড়ার ডোমজুড়ে অঙ্কুরহাটি চেকপোস্টের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডার টপকে গাড়িটি চলে আসে পাশের লেনে। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটিতে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাঁচ আরোহীর। হাওড়া জেলা হাসপাতালে মারা যান আরও এক জন। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন তিন জন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম ইন্দ্রনীল পাল (২১), বর্ষা মাহাতো (২২), স্নেহা চৌধুরী (২১), রবি জয়সোয়ারা (২২), দেবলীনা বল (২০) এবং দীপাঞ্জন বসু (২৬)। আহতেরা হলেন তমাল সাহা (১৮), অম্বর আলি (২৪) ও মহম্মদ তাজুদ্দিন (২২)। এঁদের মধ্যে মহম্মদ তাজুদ্দিন গাড়ির চালক বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাকিরা সবাই কলকাতার নিউ আলিপুর এলাকার একটি কলসেন্টারের কর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, ইন্দ্রনীলের বাড়ি গড়িয়ার রবীন্দ্রপল্লিতে, বর্ষার বাড়ি পিকনিক গার্ডেনে, স্নেহার বাড়ি লেক গার্ডেন্সে। দেবলীনা রুবি পার্ক এলাকার বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে তাজুদ্দিনের বাড়ি ওয়াটগঞ্জে। বাকিরা কলকাতা ও তার আশপাশে থাকেন। ওই গাড়িটিও ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ওয়াটগঞ্জ থেকেই। |
|
ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সেই গাড়ি। রবিবার, ডোমজুড়ে। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাটের একটি ধাবায় খাওয়াদাওয়া সারার পরে শেষ রাতে মুম্বই রোড ধরে কলকাতার দিকে ফিরছিলেন চালক-সহ ন’জন। প্রচণ্ড জোরে গাড়িটি চলছিল। অঙ্কুরহাটি চেকপোস্টের কাছে সেটি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে টপকে গিয়ে পাশের লেনে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে যায়। সে সময়েই উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক সজোরে ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রাকটি এত জোরে ধাক্কা মারে যে, গাড়িটি ছেঁচড়ে গিয়ে পড়ে পাশের একটি খালে। ভোরবেলা তখন কয়েকটি চায়ের দোকান সবে খুলেছে। সেই দোকানিরাই ঘটনাস্থলে চলে আসেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “গাড়িটি এমন ভাবে দুমড়ে গিয়েছিল যে, ভিতর থেকে নিথর দেহগুলো বার করতেই পারছিলাম না।” পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে আহত ও মৃতদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভিড় করেন মৃত ও আহতদের পরিজনেরা। অনেকে আবার খবর পেয়ে চলে আসেন অঙ্কুরহাটিতে। এ দিন ডোমজুড় থানায় দাঁড়িয়ে বর্ষার বাবা শঙ্কর মাহাতো বলেন, “দু’মাস হল মেয়ে চাকরিতে ঢুকেছে। শনিবার সকালে ডিউটিতে বেরিয়েছিল। রাতে আর ফেরেনি। কোথায় যাচ্ছে, তা-ও আমাদের কিছু জানায়নি। রবিবার সকালে থানা থেকে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেয়।” ইন্দ্রনীলের এক প্রতিবেশী সবিতা পাল বলেন, “বন্ধুরা মিলে ওরা রাতে খেতে গিয়েছিল বলে শুনেছি। ভোরে এই খবর পেলাম। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।” মৃত ও আহতেরা যে কলসেন্টারের কর্মী, সেখানকার এক আধিকারিক সন্দীপ রাউত বলেন, “দেবলীনা, দীপাঞ্জন ও ইন্দ্রনীল মাত্র দু’দিন আগে কাজে যোগ দিয়েছিল। বর্ষা ও রবি যোগ দিয়েছে মাস দুই আগে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, শনিবার দেবলীনা, দীপাঞ্জন, ইন্দ্রনীল ও রবির রাতের শিফ্ট ছিল। বর্ষার ছিল সকালে ডিউটি। তাঁর ছুটি হয় রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ। রাতের শিফ্টের কাজ কয়েক দিন হচ্ছিল না। শনিবার রাতের শিফ্টের কর্মীরা অফিসে এলে তাঁদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সন্দীপবাবু বলেন, “ছুটির পরে ওরা কে কোথায় গিয়েছে, তা আমরা বলতে পারব না।” যে গাড়িটি নিয়ে তাঁরা কোলাঘাট গিয়েছিলেন, সেটি ওই কলসেন্টারের গাড়ি নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|