|
|
|
|
বেহালা-কাণ্ড |
নিহত চার জনের শেষকৃত্যেও ছিল মূল অভিযুক্ত মুন্না |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
রোজ সকালে দু’ঘণ্টা হারমোনিয়ামে রেওয়াজ করত মুন্না। ন’টা পর্যন্ত রেওয়াজ করে দশটা নাগাদ বেরোত সে। পাড়ায় ‘কিশোরকণ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত মুন্না অনুষ্ঠানে গানও গাইত। সেই মুন্না যে কী ভাবে কাউকে খুনে অভিযুক্ত হতে পারে, তা বুঝেই উঠতে পারছেন না পড়শিরা।
তবে, ওই ঘটনার পরেও দৈনন্দিন কাজকর্মে খুব একটা বদল হয়নি বেহালার প্যারিসপাড়ার ভট্টাচার্য পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মুন্না ঢালির। পড়শিরা জানান, ময়না-তদন্তের সময়ে মর্গে যায় মুন্না, শ্মশানেও গিয়েছিল সে। রাতে বাড়িতে ফোনে জানায়, ফিরতে দেরি হবে। শ্মশান থেকে ফিরে পরের দিন থেকে রোজকার রুটিন খুব একটা বদলায়নি সে। রোজ সকাল দশটায় বেরিয়ে যেত, ফিরত সন্ধ্যার পরে। রেওয়াজ কিছু দিন বন্ধ ছিল। এক প্রতিবেশী জানান, খুনের ঘটনার পর থেকে কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল সে। এর বেশি কিছু পরিবর্তন তাঁদের চোখে পড়েনি।
টালিগঞ্জের করুণাময়ী সেতু পেরিয়ে কবরডাঙার ঢালিপাড়ায় একটি বস্তি এলাকায় বাড়ি মুন্না ঢালির। টানা বৃষ্টিতে বাড়ির সামনে উপচে পড়েছে পুকুর। বস্তিতে ছোট একটি ঘরে স্ত্রী সাইনুর বিবি, পাঁচ বছরের ছেলে সাজিদ, বাবা নুর মহম্মদ ঢালি, মা হাজিমা বিবি ও এক দিদি আচিমা ঢালির সঙ্গে থাকে মুন্না। রবিবার সকাল থেকেই অবশ্য বাড়িতে আচিমা ও সাজিদ ছাড়া কেউ নেই। সাজিদের দেখাশোনা করছেন এক প্রতিবেশী। মুন্নার মা, বাবা ও স্ত্রী বাড়িতে নেই। আচিমা বলেন, “শনিবারও সকাল দশটায় বাড়ি থেকে বেরোয় মুন্না। আর ফেরেনি।” সন্ধ্যার পরে মুন্না না ফেরায় পরিজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তার মোবাইলে ফোন করে শোনা যায়, সেটি বন্ধ। আচিমা বলেন, “দেরি হলে ফোনে জানিয়ে দিত। সে দিন ন’টার পরেও না ফেরায় আমরাই ফোন করতে থাকি।” |
|
মুন্না ঢালির বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র |
মুন্নার স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করেন। এ দিন সকালেও গিয়েছিলেন। সেখানেই টিভি দেখে প্রথমে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীকে ধরেছে পুলিশ। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসেন সাইনুর বিবি। তার পর থেকে রয়েছেন এক আত্মীয়ের বাড়ি।
মুন্নার এক প্রতিবেশী বাসন্তী ঢালি বলেন, “টাকার জন্য যে মুন্না কাউকে খুন করতে পারে, এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। অনেক সময়ে আমরা কেউ টাকা ধার চাইলে দশ-কুড়ি টাকা দিয়েও দিত। ফেরত চাইত না কখনও।”
তাঁর ভাই যে গৌরীদেবীকে খুন করতে পারে, মুন্নার দিদিও তা মানতে রাজি নন। আচিমা জানান, গৌরীদেবী কোনও কারণে অসুস্থ হলে মুন্না বাড়িতে ফোন করে জানাত ‘মাসিমার শরীর খারাপ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।’ আচিমার প্রশ্ন, “সেই ছেলে কী ভাবে ওঁর খুনে অভিযুক্ত হতে পারে?” আচিমা জানালেন, গৌরীদেবীদের খুনের ঘটনার পরে মুন্না প্রায়ই তাঁদের বলত, এ বার তার চাকরির কী হবে? কী ভাবে সংসার চলবে?
এলাকাবাসী জানান, গায়ক হিসেবে পাড়ায় মুন্নার খাতির ছিল। ঈদের অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের বাংলা গান গাওয়াটা ছিল বাঁধা। তার দু’টো গান সিডিতে রেকর্ডিংও হয়েছে বলে জানান তারা। পাড়ার সেই ‘কিশোরকণ্ঠ’ কী ভাবে চার-চারটে খুনে মূল অভিযুক্ত হতে পারে, সেটাই বুঝতে পারছেন না এলাকার লোকেরা। |
|
|
|
|
|