তীর্থ-কূটনীতিতে আশা জিইয়ে ফিরলেন কৃষ্ণ
পাকিস্তান সফরের শেষ দিনে তীর্থ-কূটনীতির সফল দৌত্য সেরে লাহৌর থেকে নয়াদিল্লি ফেরার বিমান ধরলেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। তার আগে অবশ্য নওয়াজ শরিফের ভাই তথা পাক পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করলেন। সেই বৈঠকে উঠে এল সন্ত্রাস প্রসঙ্গ, বিশেষ করে কথা হল মুম্বই সন্ত্রাসের অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রী হাফিজ সইদকে নিয়ে।
গত দু’দিন ধরে ইসলামাবাদে দফায় দফায় পাক সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কৃষ্ণ। ভিসা ব্যবস্থা শিথিল করার মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে। সন্ত্রাস জর্জরিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত যাতে সবচেয়ে ভাল বিজ্ঞাপন বলেই মনে করা হচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উপহার সঙ্গে নিয়ে আজ সকালেই লাহৌর এসেছেন কৃষ্ণ। আর এসেই শিখ ধর্মগুরু রণজিৎ সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডেরা সাহিব গুরুদ্বার ঘুরে দেখেছেন। গিয়েছেন কবি ইকবালের মাজার দাতা দরবার সুফিতেও। লাহৌর ফোর্ট-এর ঐতিহ্যময় মিনার-ই-পাকিস্তান দেখে বেরনোর সময় পর্যটক-পুস্তিকায় লিখেছেন, “ভারত সুস্থির এবং সমৃদ্ধ পাকিস্তানকে দেখতে চায়। আমাদের উচিত পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে ভাল প্রতিবেশীর মতো আচরণ করা।”
লাহৌরের দাতা দরবারে বিদেশমন্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রতিনিধি হিসেবে কৃষ্ণ যে তীর্থ-কূটনীতি সেরে গেলেন, তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মুম্বই সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তান কতটা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে যথাযথ চাপ বজায় রাখার কৌশল নিয়েই চলতে হবে সাউথ ব্লককে। তাই প্রধানমন্ত্রী কবে পাকিস্তানে আসবেন, তারও স্পষ্ট রূপরেখা স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে না গেলেও, দ্বিপাক্ষিক বিনিময় যাতে বন্ধ না হয়, তাই সব দিক থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে দিল্লি। তাই সে দেশের মানুষের ‘মন জয়’ করতে বাণিজ্যের সঙ্গে তীর্থযাত্রীদের আদানপ্রদান বাড়ানোও আশু প্রয়োজন বলেই মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তান ৬৫ বছর আগেও ভারতের অঙ্গ ছিল। এই দুই প্রান্তের মধ্যে তীর্থের যোগাযোগ সুপ্রাচীন। তাকে ভিত্তি করেই বর্তমানের অস্থির আবহকে কিছুটা ঠান্ডা করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চাইছেন মনমোহন।
দু’দেশের মধ্যে পন্থ-মির্জা চুক্তি হয়েছিল সেই ১৯৫৫ সালে। এই চুক্তির ফলে মুসলিম, হিন্দু এবং শিখ ধর্মাবলম্বীরা দু’দেশে অনুষ্ঠিত যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে পারতেন, কোনও বাধা নিষেধ ছাড়াই। চাকোয়ালের কাটাসরাজ উৎসব অথবা মিরপুরে হায়াত পিতাফি উৎসবে দল বেধে যেতেন ভারতীয় হিন্দুরা। আবার গুরু নানকের জন্মদিন, রণজিৎ সিংহের মৃত্যুবার্ষিকীতেও পাকিস্তানে গিয়ে উৎসবে মাততেন ভারতীয় শিখরা। অন্য দিকে, আজমের শরিফে খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় আসতে কোনও বাধা ছিল না পাকিস্তানিদের। ক্রমশ রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ধর্মীয় যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে আসে। ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। গত কাল সেই ভিসার পথ সুগম হয়েছে। তার পরে আজ মাজার এবং গুরুদ্বারে গিয়ে পাকিস্তানের প্রতি সদর্থক বার্তাই আজ দিলেন কৃষ্ণ।
গত কয়েক দিনের মতো আজও পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন কৃষ্ণ। দুই পঞ্জাবের মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগ এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়ানো তো আছেই, কথা হয়েছে সন্ত্রাস প্রসঙ্গেও। আগামী বছরের গোড়ায় পাকিস্তানে ভোট। জানুয়ারিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে জারদারিদের হাত থেকে। এই সময়ে জারদারি বা পিপিপি-র সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কৌশলই নিয়েছে দিল্লি। এর পিছনে সে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আঁচ করে নেওয়ার কৌশলও রয়েছে। বৈঠকে হাফিজ সইদকে নিয়েও কথা বলেছেন কৃষ্ণ-শাহবাজ। শাহবাজ জানান, ভাল সন্ত্রাসবাদী এবং খারাপ সন্ত্রাসবাদী এমন বিভাজন হয় না। তাঁর দল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং লড়বে। এ ব্যাপারে ভারতকে পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.