ফতোয়া-রুদ্ধ জীবন নিয়ে নতুন বই রুশদির
তাঁর বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার ‘অপরাধে’ তেইশ বছর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি সলমন রুশদির উপরে মৃত্যু-ফতোয়া চাপিয়েছিলেন ইরানের ইমাম আয়াতোল্লা খোমেইনি। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন তখন লেখকের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁকে একটি ছদ্মনাম বেছে নিতে বলেছিল।
রুশদি বেছে নেন জোসেফ আন্তন নামটি। তাঁর দুই প্রিয় লেখক, জোসেফ কনরাড এবং আন্তন চেকভের নামের প্রথম অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল যে ছদ্মনাম। ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার পঁচিশ বছর পরে ফতোয়ার আড়ালের সেই দিনগুলো লিপিবদ্ধ করে আর একখানা বই লিখে ফেলেছেন রুশদি। যার নাম ‘জোসেফ আন্তন।’ ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হতে চলেছে বইটি।
ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে তাঁর সব চেয়ে তিক্ত স্মৃতি খোমেইনির ওই ফতোয়া। ২০০৯ সালে একটি সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছিলেন সলমন রুশদি। ফতোয়া পরবর্তী দিনগুলো কী ভাবে কাটিয়েছিলেন তিনি? সে কথাই জানা যাবে ‘জোসেফ আন্তন’ থেকে। নিজেকে যেখানে তৃতীয় পুরুষে মি. আন্তন বলে উপস্থাপিত করেছেন রুশদি।
গোটা বিশ্বে খোমেইনির ফতোয়ার খবর ছড়াতেই লন্ডনের ইসলিংটনে নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিরাপত্তা অফিসারদের সঙ্গে ‘পালিয়ে’ যেতে হয় রুশদিকে। প্রথম সপ্তাহান্তটা কেটেছিল উস্টারশায়ারের হোটেলে তালাবন্ধ একটা ঘরে। রুশদি স্মৃতিচারণায় লিখছেন, “পাশের ঘরটায় ছিলেন ব্রিটেনের সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদক। সংবাদমাধ্যম তখন ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর লেখককে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ওই ব্রিটিশ সাংবাদিক অবশ্য জানতেন না তিনি কী ‘মিস’ করলেন।”
নিরাপত্তা অফিসাররা রুশদির সঙ্গে ছিলেন টানা দশ বছর। একই বাড়িতে তাঁর সঙ্গেই ঘুমোতেন, খেতেন ওঁরা। বাথরুমেও রুশদিকে একা ছাড়তেন না। তাঁর সঙ্গে হাঁটতেও যেতেন নিরাপত্তা অফিসারের দল। বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছাড়া বেরোতে পারতেন না লেখক। এই অফিসারদের রাখতে বছরে দশ লক্ষ পাউন্ড খরচ হত তাঁর। তবে নিরাপত্তার জন্য তাঁকে পরচুলা পরতে অনুরোধ করলেও সে প্রস্তাবে রাজি হননি রুশদি। আন্তনকে নিয়ে তিনি লিখছেন: “বুলেটপ্রুফ জামাও পরতে বলা হয়েছিল। সে রাজি হয়নি। সে পালাতে চায়নি। মাথা উঁচু করে হাঁটতে চেয়েছে।”
এই দীর্ঘ সময়ে সমারসেট, অক্সফোর্ডশায়ার, গ্লুস্টারশায়ারে ২০টি পৃথক ‘নিরাপদ’ বাড়িতে দিন কেটেছে রুশদির। শেষমেশ উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের বিশপ অ্যাভিনিউয়ে থিতু হন লেখক। তার মধ্যেই সমসাময়িক লেখক আয়ান ম্যাকুয়েন এবং হানিফ কুরেইশির সঙ্গে গোপনে দেখা করতে যেতেন তিনি। ৬৫ বছরের লেখক আন্তনের হয়ে লিখছেন: “ওই ভয়ানক নীরবতায় নিজের জীবনকে বুঝতে পারছিল না সে। জীবনটা নিয়ে কী হবে, ভাবতে পারছিল না সেটাও।”
সেই সময় ৪১-এর রুশদির মনে হয়েছিল, ৪২তম জন্মদিনটা হয়তো আর দেখা হবে না! পুলিশ তাঁকে বলেছিল, ‘ক’টা দিন চুপচাপ থাকুন। কী হবে, রাজনৈতিক নেতাদের ঠিক করতে দিন।’ দশ-দশটা বছর পেরিয়ে গিয়েছিল সব ঠিক হতে। আর তার মধ্যে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জাপানি অনুবাদককে মেরে ফেলা হয়। ওই বই নিয়ে বিতর্কের জেরে কাশ্মীর, পাকিস্তানে দাঙ্গায় প্রাণ হারান ছ’জন। যাঁরা রুশদির সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ছুরি মারা হয় ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর নরউইজিয়ান প্রকাশককে এবং মারধর করা হয় ইতালীয় অনুবাদককে।
নিজের পরিবারের জন্যেও সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতেন রুশদি। তাঁর ছেলে জাফর থাকত তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী ক্ল্যারিসা লুয়ার্ডের সঙ্গে। তাঁদের বাড়িতে রোজ সন্ধে সাতটায় ফোন করে খোঁজ নিতেন লেখক। এক দিন কেউ ফোন তুলল না। লেখক দ্রুত পুলিশ পাঠালেন সেখানে। পুলিশ জানাল, বাড়ির সামনের দরজা খোলা, আলো জ্বলছে। শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন রুশদি। মনে হয়েছিল, ওদের অপহরণ করা হয়েছে। পরে জানা যায়, পুলিশ ভুল বাড়িতে গিয়েছিল। হাঁফ ছাড়েন লেখক।
গোপনে জীবন কাটানোর ক্লান্তি থেকে রুশদিকে ছেড়ে যান দ্বিতীয় স্ত্রী মেরিয়ন ইউগিনস। পরে বিয়ে করেন এলিজাবেথ ওয়েস্টকে। বিশপ অ্যাভিনিউয়ে এলিজাবেথের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন রুশদি। কিন্তু সে জীবনটাও সহজ ছিল না। রুশদি বলছেন, “মি. আন্তনের মতো প্রকাশকের কেন বুলেটপ্রুফ দরজা-জানলাওয়ালা বাড়ি লাগবে, সেটা কনট্র্যাক্টরকে বোঝানো কঠিন ছিল।” ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে ধর্মদ্রোহের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার জন্য পরে ক্ষমা চেয়ে নেন সলমন রুশদি। মুসলিমদের বলেন, ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিরোধ নেই। ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কে চলে যান। এলিজাবেথের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায়।
এখন তাঁর ছেলে জাফর অবশ্য বলে, “ওখানে সমালোচনা ছাড়া আর কিছু ছিল না। এখানে পুলিশি-প্রহরা ছাড়াই দশটা বছর কেটেছে। কিছু ঘটেনি। আশা করি আর কিছু হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.