১) রোগী পিছু চিকিৎসকেরা ৩ মিনিট সময় দেন।
২) রোগীদের অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
৩) হাসপাতালগুলিতে ৫০ শতাংশ প্রয়োজনীয় ওষুধই অমিল।
বিহারের সরকারি হাসপাতালগুলির বেহাল দশার এমন চিত্র ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। দিল্লির ‘সোসাইটি ফর প্রমোশন অব র্যাশনাল ইউজ্ অফ ড্রাগ’ নামে সংস্থা চলতি বছরের প্রথম ছ’মাস, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রোগীদের দেওয়া ১৫৪০টি সরকারি হাসপাতালের ‘নিদান পত্র’ (প্রেসক্রিপশন) সমীক্ষা করে সংস্থাটি বিহার স্টেট হেলথ সোসাইটিকে এই রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টটি পাওয়ার পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের সুপারদের সতর্ক করা হয়েছে।
বিহারের চিকিৎসা পরিষেবার হালহকিকত জানতে ওই সংস্থাটি পটনা মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতাল এবং দ্বারভাঙা মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতাল, চারটি জেলা হাসপাতাল, আটটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আটটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জন্য চিকিৎসকরা গড়ে ১৮৮ সেকেন্ড সময় দেন। প্রেসক্রিপশনে রোগের লক্ষণগুলি তেমন ভাবে উল্লেখ করা হয় না। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রোগীদের ওষুধ অমিল এবং যা দেওয়া হচ্ছে, তাও নিম্ন মানের। অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে রোগীদের শরীরে ওষুধ-প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ৭৬%ক্ষেত্রে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের তালিকা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলিতে ৫০% ওষুধ পাওয়া যায় না।
সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে চিকিৎসকরা আগাম না জানিয়ে ছুটি নিতে পারবেন না, হাসপাতালে চিকিৎসকের আসা এবং যাওয়ার সময় উল্লেখ করে সই করতে হবে। সরকারি নির্দেশ না মানলে চিকিৎসকদের বেতন কাটার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যেই নীতীশ সরকার চিকিৎসকদের বেতন কাটার কাজও শুরু করেছে।
কেন রোগীদের পিছনে সময় দেওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে চিকিৎসক মহলের যুক্তি, সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। ভিড় সামলাতে বর্তমান চিকিৎসকদের সামনে বিকল্পও কিছু নেই। বিহার স্টেট হেলথ সোসাইটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমার বলেন, “ সমীক্ষা রিপোর্টের সুপারিশ মেনে পরিস্থিতি বিচার করে তবেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের জন্য সরকারি নীতি তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের সুপারদের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, চিকিৎসকরা যেন প্রেসক্রিপশনে রোগের লক্ষণ এবং সরকারি নীতি মেনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখেন।” আইএমএ-র বিহার শাখার সভাপতি এ কে ঠাকুর মনে করেন, “চিকিৎসকরা প্রয়োজন বুঝলেই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। চিকিৎসা করাটাই চিকিৎসকের কাজ। সরকার তা বেঁধে দিতে পারে না। অভিযোগ করতে হলে নির্দিষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন। অভিযোগের জন্য অভিযোগ করে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা ঠিক নয়।” |