কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল সরকারি জমিতে গড়ার পক্ষে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার বিকেলে রায়গঞ্জের ইনস্টিটিউট মঞ্চে দলের শিক্ষাসেলের উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য।
তিনি বলেন, “রায়গঞ্জের পানিশালায় উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন হাসপাতাল তৈরির জন্য ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করলেও রাজ্য সরকার চাষিদের জমি কেড়ে হাসপাতাল গড়ার পক্ষপাতি নয়। দল চায় যাতে সরকারি জমিতেই জেলার কোনও এলাকায় ওই হাসপাতাল গড়ে উঠুক। তাই দলের তরফে সরকারি জমি চিহ্নিত করার জন্য জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ইটাহার এলাকায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার কৃষকদের বুকে বন্দুক ধরে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না। এর পরে শুক্রবার হাসপাতাল গড়ার জন্য স্বেচ্ছায় কৃষি জমি দিতে চেয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে পানিশালা এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন পানিশালা এলাকারই একদল চাষি। ওই অবরোধে আটকে গিয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের গাড়ি। এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে অমলবাবুর পাশে বসে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অসীম ঘোষ বলেন, “চাষিদের স্বেচ্ছায় জমি দিতে আগ্রহী হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। চাষিদের ইচ্ছের বিষয়টি জেলাশাসককে লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দিয়েছি। রাজ্য সরকার অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তবে দল ও রাজ্য সরকার কৃষি জমি ধ্বংস করে হাসপাতাল গড়ার পক্ষে নয়। কংগ্রেস অহেতুক বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “২০০৯ সালে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে ৮২৩ কোটি টাকা খরচে ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচের একটি হাসপাতাল গড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। জেলা প্রশাসন এর পরে পানিশালায় ১২৫ একর জমিও চিহ্নিত করে। কেন্দ্রীয় সরকার ওই জমি পরিদর্শন করে সবুজ সঙ্কেত দিলেও উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রের হাতে তুলে দিচ্ছে না। তাই হাসপাতাল তৈরির কাজও আটকে গিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের কথায় কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না। চাষিরা জমি দিতে তৈরি রয়েছেন। জমি অধিগ্রহণ করে পানিশালাতেই হাসপাতাল গড়তে হবে। না হলে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে।” এ দিন শিক্ষাসেলের উদ্যোগে ইনস্টিটিউট মঞ্চ ছাড়াও হাসপাতাল রোড এলাকায় জেলা তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরীর উদ্যোগে শিক্ষক দিবসের পৃথক আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুটি অনুষ্ঠান মিলিয়ে জেলার প্রায় ৪০০ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অমলবাবু জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে গৌতম পালের নাম ঘোষণা করেন। যুগ্ম কার্যকরী সভাপতি হিসেবে মহম্মদ কামালুদ্দিন ও রাজু ঘোষের নাম ঘোযণা করা হয়। বিদায়ী জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি খলিলুদ্দিন সরকারকে রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে এদিন অমলবাবু জানান। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী করতেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কমিটি গড়া হল। |