পানশালার নাবালিকা গায়িকা দীপা শর্মার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। বুধবার সকালে মৃতার বাবা পূর্ণপ্রসাদ শর্মা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের কাছে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানান। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ‘লাকি’ নামের এক যুবকের খোঁজ শুরু হয়েছে। এই লাকির হাত ধরেই পানশালায় গায়িকার খোঁজে যোগ দিয়েছিল দীপা। মৃতার বাবা পূর্ণবাবুর অভিযোগ, “মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। লাকি এবং তার সঙ্গীরা এই ঘটনায় জড়িত। মামলা না করলে লাকিই হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে ৩ লক্ষ টাকা দেবে বলে বারবার টেলিফোন করছে।” শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “মৃতার বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ, খুনের মামলা রুজু হয়েছে। দেহটির ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। হোটেল মালিক, কর্মী এবং মৃতার সহ শিল্পীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। লাকি নামের যুবকের খোঁজ শুরু হয়েছে।
তবে ১৪ বছরের এক নাবালিকা কী ভাবে পানশালায় গায়িকার কাজে রাখা হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। সরকারি আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনও কর্মীকে পানশালায় কাজে রাখা যায় না। ডিসি (সদর) জানান, আইন অনুসারে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। একইভাবে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “নাবালিকাকে পানশালায় কাজ করানো যায় না। বিষয়টি আমরা দেখছি।”
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি মিউজিক্যাল বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় শর্মা বলেন, “নাবালক বা নাবালিকাকে দিয়ে পানশালায় কাজ করানো যায় না। ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কেন দেখল না তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” তবে পুলিশ পানশালা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে তা নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, “মৃত্যু রহস্যের ঘটনার তদন্ত হলেও নাবালিকাকে দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টিতে পুলিশকে উচিত এখনই ব্যবস্থা নেওয়া। তা করা হচ্ছে না।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশের ‘বোঝাপড়া’ থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সম্প্রতি মাটিগাড়ারই মেডিক্যাল কলেজ এলাকার একটি হোটেলে অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ তার পরে সেটি বন্ধ করে দেয়। সিকিম, দার্জিলিং, নেপাল থেকে তরুণীদের এনে বিভিন্ন হোটেলে গানের আসর বসানো হয় বলে অভিযোগ। এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেছেন, “পুলিশ-প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।” একইভাবে মাটিগাড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। হোটেলে অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের আরও সক্রিয় হতে বলা হবে।”
ওই হোটেলের মালিক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আমরা একটি দলকে পানশালায় গান বাজনার বরাত দিয়েছি। ওঁরাই সব দেখে। তবে ১৪ বছরের নিচে মেয়েকে রাখার বিষয়টি জানতাম না।” আর ওই গানবাজনার শিল্পীদের দলের নেতা টিঙ্কু সিংহ বলেন, “মেয়েটি একমাস ধরে কাজে যোগ দেয়। ও নাবালিকা জানতাম না। মাঝে বাড়িতেও চলে যায়। একই একটা ঘরে থাকত। নানা নেশাও করত বলে শুনেছি। ওই রাতে হোটেল থেকে ফিরে খেয়ে দেয়ে বাসন ধুয়ে পড়ে বলে শুনেছি। সকালে দরজা না খোলায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।” গত মঙ্গলবার মাটিগাড়ার শুটকি গুদাম এলাকায় একটি বাড়ি থেকে দীপার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। |