শুধু বাঁকুড়া বা উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলার লোক নয়, হায়দরাবাদের হেমন্ত রাও বুরাদা ইন্টারনেটে ঋণ দেওয়ার ফাঁদ পেতে আরও কয়েকজনকে প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করল পুলিশ।
কলকাতার লেকটাউনের এক সরকারি কর্মী এবং মুম্বইয়ের মালাড এলাকার এক কলসেন্টারের কর্মীকেও ঋণ দেওয়ার নাম করে হেমন্ত তাঁদের কয়েক হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন বলে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই দু’জনের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “হেমন্ত যাঁদের প্রতারণা করেছেন, তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে। তাঁদের কাছে তথ্য পেলে এই যুবকের কাজ সর্ম্পকে আরও জানা যাবে।” পুলিশ হেমন্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল নম্বর এবং ওয়েবসাইট থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চালাচ্ছে। |
‘জি ফিনান্স ইন্ডিয়া’ নামে এক ভুয়ো আর্থিক সংস্থার ওয়েবসাইটে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে হেমন্ত অনেককে ঠকিয়েছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বাঁকুড়া শহরের যুবক সুজয় দে ‘গ্রাহকসেবা ডট কম’ ওয়েবসাইটে ওই সংস্থার কাছে প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান। ঘোলা থানা এলাকার ব্যবসায়ী স্বর্ণকমল খামরুই ওই সংস্থার কাছেই ঋণের আবেদন করেছিলেন। তিনি ওয়েবসাইটটি দেখে সুজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শনিবার দু’জনে ফাঁদ পেতে হেমন্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বাঁকুড়া সদর থানার লক-আপে মঙ্গলবার রাত থেকে হেমন্তকে জেরা করা হলেও বুধবার পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে বিশেষ কোনও তথ্য মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আপাতত আরও দুই প্রতারিতের খোঁজ পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে লেকটাউনের বাসিন্দা নীতীশরঞ্জন দেবনাথ শীঘ্রই স্থানীয় থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।” এ দিন নীতীশবাবু দাবি করেন, “জুলাইয়ে ইন্টারনেটে ‘জি ফিনান্স ইন্ডিয়া’-এর বিজ্ঞাপন দেখে ৩ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করি। ওই সংস্থার কর্মীর পরিচয় দিয়ে সন্তোষ কুমার (আদতে হেমন্ত) নামে এক জন আমাকে ফোন করে অগ্রিম ৬ হাজার টাকা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলে। পরে ওই টাকা ফেরত দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছিল। সে টাকা আর পাইনি।” পুলিশের দাবি, একই ভাবে প্রতারিত হন মালাডের প্রণয় বোর্গিস। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞাপন দেখে ৪ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করেছিলাম। সৌরভ কুমার নামের এক ব্যক্তির কথামতো একটি অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা জমা করি। ঋণ পাইনি, ওই টাকাও হারিয়েছি।” পুলিশের দাবি, হেমন্ত তাদের জানিয়েছেন, হায়দরাবাদের সেক্টর ২ থানার ভুদা কলোনির বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধা মা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় তিনি উদ্বেগে আছেন। পুলিশ অবশ্য সেক্টর ২ থানায় খবর দেওয়া হয়েছে বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছে। দক্ষিণী এই যুবকের ভাত পছন্দ না হওয়ায় তার জন্য পুলিশ দু’বেলা রুটির ব্যবস্থা করেছেন। তবে, হেমন্তর চায়ের নেশা এতই প্রবল যে, পুলিশকর্মীরা তাঁকে ঘনঘন চা জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। |