পঞ্চায়েত ভোটে ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করল রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যে তড়িঘড়ি দু’টি অর্ডিন্যান্স আনল পঞ্চায়েত দফতর। বুধবারই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এর ফলে পঞ্চায়েত আইন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনে প্রয়োজনীয় বদল এনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়ার পথটি সুগম করা হল।
পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আগেই ছিল। এর সঙ্গে ওবিসি-দের (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) জন্য সংরক্ষণেরও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই ওবিসি-র আওতাতেই সংখ্যালঘুদের রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশ এর আওতায় চলে আসবে।
ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিলেও এই ক্ষেত্রে একটা সমস্যা ছিল। দেখা যাচ্ছিল, তফসিলি জাতি, উপজাতি, মহিলা সংরক্ষণের সঙ্গে ওবিসি যোগ করলে সব মিলিয়ে সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও ভাবেই সংরক্ষণ ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না। সেই সব দিক খতিয়ে দেখে শেষ পর্যন্ত অর্ডিন্যান্স দু’টি এনেছে সরকার। যাতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ চালু করা যায়, আবার মোট সংরক্ষণ কোনও ভাবেই ৫০ শতাংশের বেশি না হয়।
পঞ্চায়েত ভোট নির্ধারিত সময়ে হলে, অর্থাৎ আগামী বছর মে-জুনে, সে ক্ষেত্রে তার আগে বিধানসভার একাধিক অধিবেশন পাচ্ছে সরকার। তা হলে তো সেখানেই আইন দু’টি পাশ করিয়ে নিতে পারত তারা। তা না করে এত দ্রুত অর্ডিন্যান্স আনা হল কেন? পঞ্চায়েত দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, “ওবিসি জনগণনা, আসন পুনর্বিন্যাস, সংরক্ষিত আসনের তালিকাপ্রকাশ এবং সবশেষে ভোটার তালিকা সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি ছিল। অর্ডিন্যান্স হয়ে থাকায় এই কাজগুলো আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তার পরে বিধানসভার অধিবেশনে তা পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ভাবে সংরক্ষণ কার্যকর হবে? দফতরের এক কর্তা জানান, পুরোটাই নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসন ভিত্তিক জনসংখ্যার উপরে। তফসিলি জাতি ও উপজাতি, ওবিসি এবং মহিলাদের জনসংখ্যা যেমন, সংরক্ষণও হবে সেই হারে। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই মনে করছেন, সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের ঝুলিতে ধরে রাখতেই তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স এনেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে ভোট এগিয়ে আনার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ওবিসি-দের সংরক্ষণ দেব এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনেই দেব। সে জন্য ঠিক যতটুকু সংশোধনী দরকার ছিল ততটুকুই করা হয়েছে।” পঞ্চায়েত ভোট কি তা হলে এগোচ্ছে না? পঞ্চায়েতমন্ত্রীর জবাব, “পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। এর পর আমার আর কী বলার থাকতে পারে! দফতর সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।” |