|
|
|
|
গরহাজির হলদিয়ার তৃণমূল কাউন্সিলররা |
বিক্ষোভে তাল কাটলেও হল বোর্ড মিটিং |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
বিক্ষোভের জেরে প্রথমে পিছু হঠেও শেষমেশ বোর্ড মিটিং করলেন হলদিয়ার বাম কাউন্সিলররা। সিপিএমের পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠের নেতৃত্বেই হল আলোচনা। তবে প্রতিশ্রুতি দিলেও বুধবারের বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দেননি বিরোধী তৃণমূলের কাউন্সিলরা।
এ দিন বেলা ১২টা থেকে পুরভবনের গেট আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অবশ্য তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছিল না। বেহাল নিকাশির প্রতিবাদেই টানা এক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীরা বলতে থাকেন, “টানা বৃষ্টিতে বেহাল নিকাশির জন্য বিপর্যস্ত শহর। অথচ পুরপ্রধান এসি গাড়িতে ঘুরছেন।” বাম কাউন্সিলরদের গাড়ি ঘিরে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান’ ওঠে। এ সবের জেরে প্রথমে পুরভবনে ঢুকতেই পারেননি পুরপ্রধান-সহ ১৫ জন বাম কাউন্সিলর। তাঁরা চলে যান। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ফিরে এসে বোর্ড মিটিং সারেন পুরপ্রধান। ততক্ষণে বিক্ষোভ থিতিয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এ দিন সাধারণ মানুষই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডলের কথায়, “আমরা পুর এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিতেই এসেছিলাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ পুর-পরিষেবা না পেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আমরাও ঢুকতে পারিনি।” স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতে দলীয় পতাকা না থাকলেও বিক্ষোভকারীরা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। বিক্ষোভকারীদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তমালিকাদেবী বলেন, “যদি সাধারণ মানুষই হবেন, তবে ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান কারা দিচ্ছিলেন?”
গত ৩ জুন হলদিয়া পুরভোটের পর থেকে বারবার বিক্ষোভ হয়েছে পুরভবনে। |
|
পুরপ্রধানের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
তৃণমূল কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের জেরে দিনের পর দিন পুরসভায় ঢুকতে পারেননি তমালিকাদেবীরা। তখন তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের একটি জমি বেআইনি ভাবে লিজ দিয়েছে তমালিকাদেবীর পুরসভা। ২৩ জুলাইয়ের বোর্ড মিটিংও সেই সংক্রান্ত বিক্ষোভেই ভেস্তে গিয়েছিল। ২২ অগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে জমি-জট কাটে। তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর-এ স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। এরপরেই তৃণমূলের ‘সুর পাল্টায়’। উন্নয়নের স্বার্থে পুরসভার পাশে থাকার কথা বলেন নেতৃত্ব। সেই মতো এ দিনের বোর্ড মিটিংয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরদের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেল ৫টা নাগাদ যখন মিটিং শুরু হয়, তখন তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাউকেই দেখা যায়নি। আধ ঘণ্টা খানেকের বোর্ড মিটিং শেষে পুরপ্রধান বলেন, “বিরোধী দলনেতাকে এসএমএস করে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা আসেননি। নিয়ম মেনেই বোর্ড মিটিং করেছি আমরা।” বিরোধী দলনেতার অবশ্য বক্তব্য, “এই বোর্ড মিটিং মানি না। আমরা যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ মিটিং হয়নি। আর কোনও এসএমএস দেখিনি।”
এ দিনের বোর্ড মিটিং নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। তারপরও বিক্ষোভে তাল কাটে। পুরপ্রধান বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের ভূমিকা সত্যিই উদ্বেগের।” এসডিপিও, হলদিয়া অমিতাভ মাইতি অবশ্য বলেন, “পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ হওয়ায় পুলিশের কোনও কিছু করার ছিল না।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকিরও বক্তব্য, “গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ বিক্ষোভ দেখাতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি হয়নি। বোর্ড মিটিং-ও হয়েছে।”
এ দিনের বোর্ড মিটিংয়ে নিকাশির হাল ফেরানো ও ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে সমস্ত এলাকায় জলসঙ্কট রয়েছে, সেখানে নতুন টিউবয়েল বসানো হবে। অর্থ, স্বাস্থ্য, গৃহ, জল-সহ পুরসভার প্রায় ১০টি স্ট্যান্ডিং কমিটি নতুন ভাবে গঠন করার প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। |
|
|
|
|
|