শেষমেশ দুর্দান্ত একটা টেস্ট জিতল ভারত। নিউজিল্যান্ডের আরও একটা টেস্ট হারা নিয়ে সমালোচকেরা যা-ই বলুন, বেঙ্গালুরুর ম্যাচে ওরা যা উন্নতি করেছে আর যে ভাবে লড়েছে, সেটা গর্ব করার মতো। বিশেষ করে ওদের বোলারদের প্রশংসা করতেই হবে। প্রথম দিন কিউয়িদের তাতিয়ে দিয়েছিল রস টেলরের অধিনায়কোচিত সেঞ্চুরি।
ভারতের দুটো ইনিংসেই কিন্তু ধোনি আর কোহলির পার্টনারশিপ দু’দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। প্রথম ইনিংসে ভারতকে ১৭৯-৫ করে দিয়ে নিউজিল্যান্ড নিশ্চয়ই বড় লিডের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু ধোনি-কোহলি ভারতকে তিনশোয় নিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১৬৬-৫ থেকে জয়ের জন্য বাকি ৯৫ রান তুলে দেয় এই জুটি। চাপের মুখে ব্যাট করা, এমন পরিস্থিতিতে ব্যাট করা যেখানে তোমার পরে হাল ধরার মতো আর কেউ নেই, সেখানে ব্যাট করে ম্যাচ জেতানোএই রানগুলোই সবচেয়ে তৃপ্তির।
ভারতীয় সমর্থকেরা জানত যে, এ রকম পরিস্থিতি সব সময়ই তাদের অধিনায়কের সেরাটা বার করে আনে। কিন্তু সেটা ছিল ওয়ান ডে ক্রিকেটে। এখন তারা আরও এক জনকে খুঁজে পেয়েছে, যে এই কাজটা টেস্টেও করতে পারে। অবশ্যই বিরাট কোহলির কথা বলছি। দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের মতো ক্রিকেটারের অবসর নেওয়া মানে এমন কয়েক জনকে হারানো যারা চাপের মোকাবিলা করতে পারে। শুধু তাদের টেকনিক আর প্রতিভার পরিবর্ত খুঁজলেই তো হবে না। তাদের মনোভাবটাও বদলি ক্রিকেটারদের থাকা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কিন্তু মনোভাবটাই বেশি দরকার। ঠিক এই ক্ষমতাটাই প্রচুর পরিমাণে কোহলির মধ্যে দেখলাম। লড়াকু ক্রিকেটাররা বোঝে যে, পরিস্থিতি যত কঠিন হবে, জ্বলে ওঠার সুযোগটাও তত বেশি থাকে। হার-জিতের কথা মাথা থেকে বার করে দিয়ে বলের পর বলের উপর ফোকাস রাখাএই ব্যাপারটা আয়ত্ত করা মোটেই সহজ না।
পর্বতারোহীদের পাহাড় চুড়োয় পৌঁছতে না পারার সবচেয়ে সাধারণ মানসিক কারণ নাকি এটা যে, তারা খুব বেশি করে চুড়োয় ওঠার কথা ভাবে। যার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যাপারগুলোর দিকে তাদের নজর থাকে না। ভাববেন না, ধোনি বা কোহলিকে পাহাড়ে চড়ার পরামর্শ দিচ্ছি! আমি বলতে চাইছি, একটা নির্দিষ্ট রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করা আর পাহাড়ে ওঠা অনেকটা একই রকম। প্রতিটা বলকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, বর্তমান নিয়ে ভাবলে ভবিষ্যতের ফলটা নিশ্চয়ই ঠিকঠাক হবে।
টেস্ট ম্যাচের শেষ দিন ধোনির কয়েকটা মন্তব্যও আমার খুব ভাল লেগেছে। ধোনি নিজের ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিল, দলের তরুণ ক্রিকেটাররা কারও বদলি হিসেবে আসেনি। ওরা এখনও শিখছে। কারও নাম না করে খুব সূক্ষ্ম ভাবে ধোনি ইঙ্গিত করেছিল যে, কয়েক জনকে আরও রান করতে হবে। মনে হয় এরাই টেস্টের ‘কোর’ দলে থাকবে। যার জন্য ওদের আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ভারতের সব পিচ কিউরেটরদের প্রতিও ধোনির একটা বার্তা ছিল। তবে সেটা সূক্ষ্ম নয়। ও বলেছিল, অন্তত টেস্ট ম্যাচের জন্য যেন দেশে টার্নিং উইকেট পায়। কয়েক মাস পরেই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আসছে, অশ্বিন-ওঝা এত ভাল ছন্দেধোনি ভুল কী বলেছে? |