নির্মাণের দেড় মাসের মধ্যেই জলের তোড়ে ভেসে গেল কানা দামোদরের উপর স্লুইস গেটের গার্ডওয়াল। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছিল সেটি। এর ফলে তারকেশ্বরের বালিগড়ি পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেচ দফতর অবশ্য নদীর উপর ওই ফাঁকা জায়গায় কয়েকশো বালির বস্তা ফেলে মেরামতির কাজ শুরু করেছে।
ডিভিসির এসডিও (ইরিগেশন) তপন পালের দাবি, জলসম্পদ বিভাগ টেন্ডার নিয়ে ওই গার্ডওয়াল সংস্কার করছিল। দীর্ঘদিন সেটির সংস্কার হয়নি। ফলে সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সেটি ভেসে গেল। এখন বালির বাঁধ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবরে ফের সংস্কারের কাজ হবে। রাজ্যের সেচ দফতরের প্রধান সচিব তুষারকান্তি ঘোষ বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫ ফুটের ওই লকগেটে ১৫ ফুটের ৮৪৬ নম্বর গার্ডওয়ালটি তৈরি হয়েছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নির্মাণে ত্রুটি থাকায় গার্ডওয়ালটি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে জলের তোড়ে ভেসে গেল। স্থানীয় বাসিন্দা নবকুমার সামন্ত বলেন, “গার্ডওয়ালটি ভেঙে নতুন করে তৈরির সময় থেকেই নির্মাণ-পদ্ধতি নিয়ে আমরা আপত্তি জানাচ্ছিলাম। গার্ডওয়ালটি ধরে রাখার জন্য কোনও লোহার খাঁচা তৈরি করা হয়নি। বিষয়টি দেখার জন্য সেচ দফতরের কর্তাদের বারবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে কোনও রকম তদারকি করা হয়নি। ফলে দেড় মাসের মধ্যেই নতুন গার্ডওয়াল ভেসে গিয়েছে।”
তিনি জানান, নির্মাণকাজে ত্রুটি নিয়ে সেই সময় গ্রামবাসীরা সরব হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা গ্রামের লোককে বুঝিয়ে কাজ চালু রাখেন। অভিযোগ, শুধুমাত্র নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমনই, বৃষ্টি হলে বালিগড়ি পঞ্চায়েত এলাকার কলাপুকুর, হাঁসপুকুর, মনোহরপুর-সহ ৮-১০টি গ্রাম ভাসার আশঙ্কা করছেন এলাকার লোক। গ্রামবাসীদের কথায়, “প্রতি বারই নিয়ম করে বন্যায় ভাসি। এ বারও মনে হচ্ছে তার ব্যতিক্রম হবে না। এখন আকাশই ভরসা। বৃষ্টি থামলে বেঁচে যাব। নইলে ফের ভাসব।”
গত সোমবার গার্ডওয়ালটি ভেসে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তপনবাবুকে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পরে দফতরের কর্তারা দ্রুত গার্ডওয়াল মেরামতির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মাস দেড়েকের মধ্যেই গার্ডওয়াল ভেসে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সেচ দফতরের কর্তারাও। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, “যাতে গ্রামগুলি ভেসে না যায় সে জন্য দ্রুত ওই গার্ডওয়াল মেরামতির কাজ শুরু করব। তবে এখন আকাশের যা অবস্থা বালি, সিমেন্ট দিয়ে কাজ করানো যাবে না। আপাতত বালির বস্তা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।” |