সম্পাদকীয় ২...
নজরদারি
রকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়মিত উপস্থিতির উপর নজরদারির জন্য রাজ্য সরকার ‘বায়োমেট্রিক কার্ড’ ব্যবহারের উদ্যোগ করিয়াছে। এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানোই কর্তব্য। চিকিৎসকরাও ইহাকে স্বাগত জানাইবেন এবং সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করিবেন, এমনই প্রত্যাশা করা যাইতে পারে। কেবল ডাক্তাররাই নহেন, হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হইতে অধ্যক্ষ কিংবা সুপারিন্টেন্ডেন্ট অবধি সকলেই নিজের উপস্থিতি নথিভুক্ত করিবার এই পদ্ধতি নিয়মিত পালন করিলেই ঠিক হয়। ইহা প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা বলিয়া সহজে তাহার নথিভুক্ত তথ্যে হেরফের করা কঠিন। কোনও এক জনকে অনেকের উপর নজরদারি করিয়া সময় এবং সম্পর্ক নষ্ট করিবারও প্রয়োজন নাই। যন্ত্রই নীরবে, প্রত্যহ নজরদারি করিয়া যাইবে। এই নিরন্তর প্রহরা যে রহিয়াছে, তাহাই বহু কর্মীকে নিজ কর্তব্যে ফাঁকি না দিতে বাধ্য করিবে। সংবাদে প্রকাশ, কোনও চিকিৎসক নাকি বলিয়াছেন, দু’ঘন্টায় কাজ শেষ হইলে কেন ছয় ঘন্টা থাকিতে হইবে? উত্তর সহজ, ছয় ঘন্টা কাজ করিবার জন্যই তিনি বেতন পাইতেছেন। যদি পূর্ণ সময়ের কাজ না থাকে, তাহা হইলে আংশিক সময়ের কর্মী হিসাবে তিনি যোগ দিন। জনসম্পদ নষ্ট করিয়া তিনি জনগণকে যথাযথ পরিষেবা হইতে বঞ্চিত করিবেন, ইহা কী রূপে সঙ্গত?
তবে এই অভিযোগটি একটি বাস্তব সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। হাসপাতালে মানবসম্পদের অভাব আছে সত্য, কিন্তু যে চিকিৎসক-নার্স-কর্মীরা রহিয়াছেন, তাঁহাদেরও যথাযথ ব্যবহার হয় না। কেহ অতি সামান্য কাজ করেন, কেহ সাধ্যাতিরিক্ত কাজ করেন। কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কর্মী, কোথাও কর্মী অলস বা অনুপস্থিত বলিয়া বাড়তি কর্মী দিতে হইতেছে, কোথাও বা চিকিৎসক নিজেই অধস্তন কর্মীর কাজ সামলাইতে ছোটাছুটি করিতেছেন। এই চরম অব্যবস্থার অবসান ঘটাইতে হইবে। কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা তাহার প্রথম ধাপ মাত্র। অব্যবস্থার চরম সমাধান নহে। বায়োমেট্রিক কার্ড ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে উপস্থিতি নথিভুক্ত করিবার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থা না লইলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হইবে না। প্রথমত, যন্ত্রে বিধৃত উপস্থিতির তালিকার উপর নিয়মিত নজরদারি এবং তাহার ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিহার এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা লইয়াছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করিয়া অনুপস্থিত ডাক্তারদের নির্দিষ্ট করা হয়, এবং ষাট জনেরও অধিক ব্যক্তির শাস্তি চূড়ান্ত করা হইতেছে। শাস্তি হইবে, ইহা নিশ্চিত হইলে সহসা কেহ নিয়মভঙ্গ করিতে সাহস করে না।
তাহা ভিন্ন, অলস উপস্থিতি যথেষ্ট নহে। ফলাফলের ভিত্তিতেও মূল্যায়ন করিতে হইবে। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে কর্মীরাই নিজেদের বার্ষিক লক্ষ্য নির্দিষ্ট করিতে পারেন, অথবা সরকার-নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করিবার অঙ্গীকার করিতে পারেন। স্বমূল্যায়ন ও বহির্মূল্যায়ন তাঁহাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতেই হইতে পারে। কিন্তু একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনবরত রোগী পাঠাইতেছেন, অপর হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাহাদের সামলাইতে হিমসিম খাইতেছেন, এই অবস্থা চলিতে পারে না। আরও একটি ব্যবস্থা জরুরি। চিকিৎসকদের সহায়তার জন্য যে পরিষেবাগুলি প্রয়োজন, সেগুলিতেও কর্মীদের উপস্থিতি এবং তৎপরতা নিশ্চিত করিতে হইবে। এক্স-রে প্রভৃতি পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ঔষধালয়, সাফাই এবং অন্য নানা প্রকার সহায়তার জন্য যাঁহারা রহিয়াছেন, সেই কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রায়শই প্রশাসনের নিকট যথেষ্ট কঠিন হইয়া পড়ে। তাহাদের বদলি করিতে, শাস্তি দিতে মন্ত্রীরাও দ্বিধা করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সহিত এই সকল কর্মীর দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করিতে হইবে। চিকিৎসকদের নিয়মানুবর্তিতার প্রতি নজরদারি এই দীর্ঘ, কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ার শুভ সূচনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.