সম্পাদকীয় ১...
মুখ্যমন্ত্রী সজাগ হইলেন
বশেষে বুঝি বোধোদয় হইল। কিছুটা বিলম্বিত, তবু বিপদটিকে উড়াইয়া দিবার কিংবা তাহার বিপন্নতাকে লঘু করিয়া দেখাইবার অসংবেদী মনোভাব হইতে মুখ্যমন্ত্রীর মুক্ত হইবার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার অননুকরণীয় ভঙ্গিতে জানাইয়া দিলেন, ডেঙ্গিতে কলিকাতায় কিছু মৃত্যু ঘটিয়াছে, অনেকেই আক্রান্ত হইয়াছেন এবং এই মারণরোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাইতে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য-পরিষেবা ও নাগরিকদের আরও সজাগ ও তৎপর হওয়া জরুরি। শুধু তাহাই নহে, সরল, সহজবোধ্য ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের করণীয় কী, এই সঙ্কট হইতে রক্ষা পাওয়ার আগাম উপায় কী, তাহাও সবিস্তার ব্যাখ্যা করিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সংবেদনশীলতা, উদ্বেগ এবং নাগরিকদের প্রতিষেধক ও নিরাময়ের ব্যাপারে সজাগ করার অভিপ্রায় স্বাগত।
ডেঙ্গি সম্পর্কে সবিস্তার বলিতে গিয়া মুখ্যমন্ত্রী এমন কিছু কথা উচ্চারণ করিয়াছেন, এমন কিছু শলাপরামর্শও বিতরণ করিয়াছেন, যাহা চিকিৎসকদের কাছ হইতে জানাই হয়তো শ্রেয় ছিল। তথাপি রক্ত-পরীক্ষার কার্যকারিতা বিষয়ে তাঁহার মন্তব্য বা স্বল্পাহারীদের রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা সম্পর্কে তাঁহার বক্তব্য অপ্রয়োজনীয় ছিল। সকল বক্তব্য খুব একটা বিজ্ঞানসিদ্ধ কিংবা যুক্তিপূর্ণও নয়। এ ধরনের অবাঞ্ছিত মন্তব্য তথা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলার প্রবণতাটি তাঁহার নিকট অপ্রত্যাশিত নয়। ইতিপূর্বে রাজ্যে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনা কিংবা বিচারব্যবস্থা তথা আইনজীবীদের সম্পর্কে তাঁহার মন্তব্যগুলি প্রসঙ্গত স্মর্তব্য। বস্তুত, শুধু মমতা নয়, সাধারণ ভাবে অনেক রাজনীতিকই এই প্রবণতায় কমবেশি গ্রস্ত। অথচ প্রশাসক হিসাবে এ ধরনের মন্তব্য হইতে বিরত থাকাটাই শ্রেয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে যে কোনও জ্বর বা অসুখে মৃত্যুকেই ডেঙ্গি বলিয়া চালাইবার অভিযোগ কিংবা ‘ব্যবসায়িক’ স্বার্থের অপ্রমাণিত দোষারোপও মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে শোভন নয়। তবু ডেঙ্গি বা তাহার নির্ণয় কিংবা নিরাময়পদ্ধতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না-হওয়ার স্বীকারোক্তির মধ্যে এবং পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় ঝাঁপাইয়া পড়ার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে প্রশাসক হিসাবে তাঁহার দায়বদ্ধতাও স্পষ্ট।
কলিকাতার মেয়র কিংবা রাজ্যের কোনও কোনও মন্ত্রী প্রথমাবধি ডেঙ্গির প্রকোপ লঘু করিয়া দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছেন। ডেঙ্গি অনিবার্য, ইহার প্রকোপ হ্রাস করা সম্ভব নয়, ইত্যাকার দার্শনিক মন্তব্যও পাওয়া গিয়াছে। নাগরিকরা চাহেন, পুরসভা নিকাশি নালা পরিষ্কার রাখিবে, ডেঙ্গিবাহী মশকের আঁতুড়ঘর ধ্বংস করিবে এবং রোগ দেখা দিলে দ্রুত রক্ত-পরীক্ষা করিয়া রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করিবে। কোন সংবাদমাধ্যম সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়া ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর দিতেছে কিংবা কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোম মৃতের শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ রূপে ডেঙ্গিকে শনাক্ত করিতেছে এবং তাহাদের কী ভাবে শায়েস্তা করা যায়, চক্রান্ত কী ভাবে রুখিয়া দেওয়া যায় ইত্যাদি অবান্তর প্রসঙ্গে সময় ও মস্তিষ্ক অপচয় না করিয়া অতঃপর তাঁহারাও আশা করা যায় তাঁহাদের নেত্রীর অবস্থান হইতে প্রয়োজনীয় সঙ্কেত খুঁজিয়া লইবেন। মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব সহকারে ডেঙ্গির প্রকোপ ও ভুক্তভোগী নাগরিকদের আরোগ্যের বিষয়টি বিবেচনা করিতেছেন। অন্তত এই বার তাঁহার অনুগামীরা শিখিবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.