স্কুলের সময়ে স্কুল ছেড়ে এক সরকার-বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ওঁরা। শুধু তাই নয়, সেই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য স্কুলেরও বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে জুটিয়ে নিয়ে এসেছিলেন আরকাটিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। আর সেই অপরাধেই ওই দুই স্কুল-শিক্ষককে সাসপেন্ড করেছে প্রশাসন।
সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, ১৯৫৪ সালের সরকারি কর্মী-শিক্ষকদের শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, শিক্ষকতা বা অন্য কোনও সরকারি চাকরিতে বহাল থেকে সরকার-বিরোধী কোনও কর্মসূচিতে তাঁরা অংশ নিতে পারেন না। ওই আইন লঙ্ঘনের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ওপর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকরা কোথাও যেতেও পারেন না। আন্দোলনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা।
শিলচর-ইম্ফল জাতীয় সড়কের কাছাড় জেলার সদরঘাট-রংপুর-কাশীপুর অংশটি সংস্কারের জন্য সম্প্রতি নাগরিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল অল বরাক ইয়ুথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (অবিসা)। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে অবিসা। রাস্তার বেহাল দশায় ভুক্তভোগী শত শত সাধারণ মানুষও আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। ওই রাস্তায় চলাচলকারী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এতে শামিল হয়। অবরোধকারীদের বক্তব্য, সরকারের বিভিন্ন মহলে বহু আবেদন-নিবেদন করেও এই রাস্তা সারাইয়ের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। বাধ্য হয়েই অবিসার ডাকে নাগরিক সমাজ বিষয়টি সরকারের শীর্ষ কর্তাদের গোচরে আনার জন্য রাস্তা অবরোধে নামে। প্রাশাসনের অভিযোগ, অবরোধে সামিল হন নজরুল ইসলাম লস্কর এবং সাহারুল আহমেদ মজুমদার নামে আরকাটিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকও।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা অবশ্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই সময় তাঁরা স্কুলেই ছিলেন। তাঁদের অহেতুক ফাঁসানো হচ্ছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে অবিসা ও সারা অসম হাইস্কুল শিক্ষক সংস্থা প্রতিবাদ জানিয়েছে। অবিসার মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়া বলেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনও শিক্ষক যোগ দেননি।
বহু স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এ দিন স্কুল বাতিল করে রাস্তার জন্য অবরোধে সক্রিয় ভূমিকা নেন। তাঁর কথায়, জেলা জুড়েই রাস্তার বেহাল অবস্থা। আন্দোলন শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। জেলা প্রশাসন রাস্তা সংস্কারে ব্যর্থ হয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলা আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে সক্তিয় হয়ে উঠেছে। দুই শিক্ষককে সাসপেন্ড করে ভুক্তভোগী সাধারণ সরকারি কর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে। শিক্ষকদের উপর থেকে সাসপেন্ড তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অবিসা।
পাশাপাশি, শিক্ষক সংস্থার জেলা সভাপতি অধীরচন্দ্র সূত্রধর বলেন, তাঁরা খবর নিয়ে জেনেছেন, শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধে অংশ নেননি। অহেতুক তাঁদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তাই এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরাও। আর রাস্তার যে অংশের বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ, অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রাস্তাটির দায়িত্বে রয়েছে সীমান্ত সড়ক টাস্ক ফোর্স। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই ওই অংশের সংস্কারের কাজ শুরু হবে। |