স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা মজা করে বলতেন, ‘হেডমাস্টার’। প্রধান শিক্ষকের ঢঙেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতেন পি চিদম্বরম। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথায়, কতখানি ফাঁক রয়েছে, তার জবাবদিহি চেয়ে রাজ্যের পুলিশ-কর্তাদের কাছে কড়া প্রশ্নমালা পাঠাতেন। সন্তোষজনক জবাব না মিললে ধমক দিতেও পিছপা হতেন না। জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র বা এনসিটিসি-র মতো বিষয়ে এই কারণে বার বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধও বেঁধেছে চিদম্বরমের। কড়া হাতে মাওবাদী দমনের পক্ষেও বরাবর মত দিয়েছেন তিনি।
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে চিদম্বরমের রাস্তায় হাঁটবেন, না রাজ্যগুলির সঙ্গে বোঝাপড়া করে এগোবেন, এ বার সেই প্রশ্নের উত্তর মিলতে চলেছে। কাল থেকে দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের বৈঠক শুরু হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-আইজিদের এই সম্মেলনেই মাওবাদী সমস্যা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী মনোভাব নিচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা। এনসিটিসি-র মতো নানা বিষয়ে শিন্দে রাজ্যগুলির সঙ্গে কতটা বিরোধে যান, তা-ও বোঝা যাবে।
এ ছাড়াও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণে চিদম্বরমের নানা পরিকল্পনা শিন্দে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তা-ও ডিজি-সম্মেলনে স্পষ্ট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ বারের সম্মেলনেই প্রথম দেশীয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নিয়ে বিশেষ ভাবে আলোচনা হবে। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, লস্কর-ই-তইবা বা হুজি-র সঙ্গে এদের বড় পার্থক্য হল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সন্ত্রাসবাদীরা প্রায় সকলেই এ দেশের নাগরিক। তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলেও বা পাক জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্ট হলেও, এদের ক্ষেত্রে সরাসরি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলা মুশকিল। সম্প্রতি পুণের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পিছনেও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হাত মিলেছে। কাজেই এ নিয়ে পৃথক আলোচনার প্রয়োজন। এ ছাড়া এ বারের ডিজি সম্মেলনে উত্তর-পূর্বের জঙ্গি-সংগঠনগুলির মায়ানমার এবং চিনে উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে। মাওবাদী সমস্যার পর্যালোচনা, মাওবাদীদের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদান ও তদন্তে পারস্পরিক সাহায্য নিয়েও আলোচনা হবে।
কলকাতায় মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী কালের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে মাওবাদী মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। এক দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট অভিযান এবং অন্য দিকে উন্নয়ন, পাশাপাশি বেশ কিছু মাওবাদী নেতানেত্রীর আত্মসমর্পণের ঘটনাও রাজ্য প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও মানছে, মাওবাদী মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কারণ এ বছর রাজ্যে মাওবাদী হিংসায় কোনও হতাহতের খবর নেই। |