দীপাবলির প্রস্তুতি বদলে গেল শোকমিছিলে
শিবকাশীতে ছাই বাজি কারখানা, মৃত্যু ৫৪ জনের
য়েক মাস পরেই দীপাবলি। বাজি কারখানাগুলিতে তাই আজও ছিল রোজকার মতো চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কিন্তু দুপুর একটা নাগাদ একটি কারখানায় ঘটে যায় বিপর্যয়। হঠাৎই বিস্ফোরণ। মুহূর্তের মধ্যে আগুন লেগে যায় গোটা বাড়িটায়। তার পর একের পর এক বিস্ফোরণ। তামিলনাড়ুর শিবকাশীর কাছে মুথালীপট্টায় আজ ওই বাজি কারখানায় আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। আহত অন্তত ৫০ জন। তবে মৃতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ধ্বংসস্তূপে অনেকেই আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা স্থানীয় প্রশাসনের।
শিবকাশী ও তার আশপাশের এলাকায় রয়েছে প্রচুর বাজি কারখানা। সারা দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজি তৈরি হয় এখানেই। রুজির টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে কাজ করতেও আসেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, শিবকাশী ও তার আশপাশের অঞ্চলে প্রায় সাড়ে চারশোর উপর বাজি কারখানায় কাজ করেন চল্লিশ হাজার মানুষ। কারখানাটিতে আজ যখন আগুন লাগে, তখনই প্রায় ৩০০ জন কর্মী সেখানে কাজ করছিলেন। ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনই নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। ধ্বংসস্তূপ পুরোপুরি না সরালে সেই সংখ্যাটা পরিষ্কার হওয়া সম্ভবও নয়।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে দেহ। শিবকাশীর বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে। ছবি: এএফপি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, দুপুরের দিকে হঠাৎই বিস্ফোরণের আওয়াজে চমকে ওঠেন তাঁরা। দেখেন, ‘ওমশক্তি ফায়ারওয়ার্কস’ নামের ওই কারখানা দাউদাউ করে জ্বলছে। কারখানার বিভিন্ন ঘর থেকে আসছে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার অঞ্চল। দমকলের এক অফিসার জানালেন, মোট ১০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি ওই কারখানায় ৪০টি ঘর ছিল। তার মধ্যে ২০টিই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আগুনে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে কারখানা চত্বরের ৪৮টি শেডই। তিনটি গুদামের মধ্যে দু’টিই ছাই হয়ে গিয়েছে। গুদামগুলি বেশির ভাগই রাসায়নিকে ঠাসা ছিল।
প্রথম বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেই স্থানীয় বেশ কিছু বাসিন্দা ছুটে কারখানায় ঢুকে উদ্ধার কাজে হাত লাগাতে যান। কিন্তু আগুন আর ধোঁয়ার গ্রাসে আটকে তাঁদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃতদের মধ্যে কারখানার কর্মীরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারাও আছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কারখানায় পশ্চিমবঙ্গের কিছু কর্মীও কাজ করতেন। তাঁদের বেশির ভাগই যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সাত্তুর, বিরুধুনগর ও শিবকাশীর হাসপাতালে মৃতদেহগুলি রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেহই চেনার অযোগ্য। হাসপাতালগুলি সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতদেহগুলির ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে। মৃত বা আহতদের আত্মীয়রা অনেকেই তাঁদের পরিজনকে চিনতে পারছেন না। মৃতদের পরিচয় নিয়েও তাই তৈরি হয়েছে চরম বিভ্রান্তি। আহতদের বেশির ভাগকেই রাখা হয়েছে মাদুরাই, বিরুধুননগর ও শিবকাশীর সরকারি হাসপাতালে। আগামী কাল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা মুথালীপট্টায় যাবেন।
পুড়ে ছাই সব কিছু। শিবকাশীর বাজি কারখানায়। ছবি: পি টি আই।
আজ বিস্ফোরণের পর পরই দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু আগুন আয়ত্তে আনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তাদেরও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তীব্র ধোঁয়ায় কয়েক জন দমকলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই কারখানায় আগুন নেভানোর পাশাপাশি আশপাশের কারখানাগুলিতে যাতে আগুন না ছড়িয়ে পড়ে, সে চেষ্টাও করেন তাঁরা। শেষমেশ আগুন নেভাতে বিকেল গড়িয়ে যায়। বিরুধুননগর জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হোড়া জানিয়েছেন, দীপাবলির জন্য বাজি তৈরির কাজ চলছিল জোর কদমে। কোনও একটি শৌখিন আতসবাজিতে রাসায়নিক মেশানোর সময়ই বিস্ফোরণটি ঘটে।
তবে এ রাজ্যে বাজি কারখানায় আগুনের ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০০৯ সালের অক্টোবরে তিরুভাল্লুর জেলার পাল্লিপাট্টুর একটি বাজির গুদামে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছিল ৩২ জনের।
ঘটনার পর থেকেই কারখানার মালিক পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ কারখানায় মজুত রাখতেন তিনি। একটি সূত্র আবার এ-ও জানাচ্ছে, গত কালই ওই কারখানার লাইসেন্স বাতিল করেছিল বিস্ফোরক দফতর। আজ থেকে ওই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকার কথা ছিল। এখন প্রশ্ন, বিধি-নিয়মের তোয়াক্কা না করে আজও কী ভাবে সেখানে বাজি তৈরি হচ্ছিল? উত্তর মেলেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.