পশ্চিমবঙ্গে এসইজেডের বদলে ইনফোসিস দেশের মধ্যে ব্যবসা করার কেন্দ্র গড়ে তুলুক আপাতত এমনটাই চাইছে রাজ্য সরকার।
রাজারহাটে ইনফোসিসের প্রস্তাবিত প্রকল্পকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) তকমা দিতে আপত্তির কথা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্য দিকে ইনফোসিসেরও বক্তব্য, এসইজেডের আর্থিক সুবিধা না পেলে তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় প্রস্তাব ওঠে শাপুরজি পালোনজির অনুমোদিত এসইজেডে (যেখানে আর প্রকল্প গড়তে রাজি নয় শাপুরজি পালোনজি) প্রকল্প গড়ুক ইনফোসিস। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্যের পক্ষে অনুঘটকের বেশি কোনও ভূমিকা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ দু’টি সংস্থাই ব্যবসায়িক হিসেব কষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তাই বিকল্প হিসেবে রাজারহাটে রফতানি কেন্দ্রের বদলে ‘ডোমেস্টিক বিজনেস’ বা দেশের মধ্যে ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্র গড়ে তুলতে ইনফোসিসকে প্রস্তাব দেবে রাজ্য। সেখান থেকে প্রয়োজনে বিদেশে রফতানি করা যাবে। তবে তার পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় এসইজেড তকমা জরুরি হবে না।
দেশীয় ব্যবসার কেন্দ্র গড়ার পক্ষে রাজ্যের সওয়াল হল, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন মন্দা চলছে। আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার এখনও ২০০৮ সালের মন্দার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আউটসোর্সিং নিয়ে আমেরিকার বিরূপ মনোভাব। ফলে বিশ্ববাজারে ইনফোসিসের ব্যবসা বাড়ছে না। সেই তুলনায় দেশীয় বাজারে ব্যবসা সামান্য হলেও বাড়ছে। এবং সেই বাজারের দিকে এখন নজরও দিচ্ছে ইনফোসিস।
ইনফোসিসকে রাজ্যে ধরে রখার ব্যাপারে মমতার সরকারের যেমন আগ্রহ আছে, তেমনই রাজ্যে প্রকল্প গড়তে আগ্রহী ইনফোসিসও। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের মতে, রাজ্যের চিরাচরিত পুঁজি মেধা-সম্পদের টানেই আগ্রহী তারা। ভুবনেশ্বরে সংস্থার কেন্দ্র রয়েছে। ইনফোসিস সূত্রের খবর, দক্ষ কর্মীরা ভুবনেশ্বরের তুলনায় কলকাতায় কাজ করতে আগ্রহী।
প্রকল্প নিয়ে টানাপোড়েন যা-ই থাক, এ রাজ্য থেকে ইনফোসিস যে হাত গুটিয়ে নেয়নি তার ইঙ্গিত গত মাসেই দিয়েছিলেন সংস্থার প্রাণপুরুষ নারায়ণ মূর্তি। এক অনুষ্ঠানে এসে কলকাতা কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি খুবই আশাবাদী। এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বিশ্বের সব বড় সমস্যারই সমাধান সূত্র রয়েছে। তাই আমরা যে সমস্যার সমাধান হয় না বলে ভাবি, তারও সমাধান রয়েছে।”
রাজারহাটে তাদের জন্য যে ৫০ একর জমি বরাদ্দ হয়েছে, তার লিজ দলিল চেয়ে গত সপ্তাহে রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে ইনফোসিস। আজ, বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ইনফোসিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। বুধবার তিনি বলেন, “খোলা মনে ইনফোসিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। ইনফোসিসের লগ্নি এ রাজ্যে ধরে রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টা করব। তবে এসইজেড নিয়ে আমাদের অবস্থান বদলায়নি।” |