ধান কেনার পরেই চাষিদের চেক দেওয়া সরকারি নিয়ম। রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতিও বটে। অথচ সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির পাঁচ মাস পরেও টাকা পাননি মন্তেশ্বরের বেশ কিছু চাষি।
বর্ধমানের ওই ক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ, গত মার্চে তাঁরা স্থানীয় জামনা কৃষি উন্নয়ন সমবায়ে ধান বিক্রি করেছিলেন। পাঁচ মাস কেটে গেলেও ধানের দাম পাননি। দাম চেয়ে জেলাশাসক থেকে বিডিও-র কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে টাকার সংস্থান না হলে সমবায় সমিতির কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও টাকা মেলেনি। গত শুক্রবার মন্তেশ্বরের বিডিও প্রদীপ বাড়ুইয়ের কাছে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ৭৫ জন চাষি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের ১৮টি গ্রামের চাষিরা ওই সমবায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করেছিলেন। চাষিদের বক্তব্য, ওই সময়ে খোলা বাজারে দাম কম থাকায় তাঁরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেন। ধান কেনার পরে ২১ দিনের মধ্যে তাঁদের ‘চেক’ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন সমবায়ের কর্তারা। এর পরে পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে। জামনা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চে ২৮৩ জন চাষি তাদের কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন। জামনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের শেখ সেরামত বলেন, “ওই সমবায় ৩৩ হাজার বস্তা ধান কিনেছিল। যার মূল্য ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা। তার মধ্যে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা চাষিদের দেওয়া হয়েছে।”
সমস্যা শুরু হয়েছে বাকি টাকা পাওয়া নিয়েই। গত ৫ এবং ৩০ অগস্ট চাষিরা এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। স্থানীয় শেলে গ্রামের অমিতাভ মণ্ডল, বরণডালা গ্রামের আব্দুল বারেকদের আক্ষেপ, “সরকারের কাছে ধান বিক্রি করে মহা ফাঁপরে পড়েছি। টাকা যে কী ভাবে পাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।” চাষিরা জানান, ঋণ নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তাঁরা। এখন আবার আমন চাষও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে বকেয়া টাকা না মেলায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। সমবায়টির বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’র অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।
তবে জামনা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ম্যানেজার মজনু আলি বড়ার দাবি, “আমরা যে ধান কিনেছিলাম তা চালকলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু খাদ্য নিয়ামক দফতরের গুদাম খালি না থাকায় সেখানে চাল পাঠানো যায়নি। ফলে, আমরা সরকারের কাছ থেকে টাকা পাইনি। চাষিদেরও চেক দিতে পারিনি।” বিডিও-র বক্তব্য, “বিষয়টি অনেক পুরনো। চালকল মালিক ও খাদ্য নিয়ামক দফতর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। আগামী সপ্তাহে বৈঠক ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।” জেলা খাদ্য নিয়ামক শঙ্খশুভ্র বাঁকুড়া বলেন, “গুদাম খালি না থাকার জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কম্পিউটারের সার্ভারেও সমস্যা হচ্ছিল। আশা করি, সাত দিনের মধ্যে বিষয়টি মিটে যাবে।” |