সুইমিং পুল পরিচালনায় ত্রুটি ছিল। তার জেরেই ছাত্র-মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মেনে নিলেন বর্ধমানের কল্পতরু ময়দানে পুলের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফেও এই ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আলমগঞ্জের ওই সংস্থার সম্পাদক কেষ্ট ঘোষ। তিনি বলেন, “এই তদন্ত চলাকালীন ওই পুল আর খোলা হবে না। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে।”
গত রবিবার রাতে ওই সুইমিং পুল থেকে উদ্ধার হয় কলেজছাত্র রমেন সামন্তের দেহ। তিনি নিয়মিত ওই পুলে সাঁতার কাটতে যেতেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে রমেনকে। পুলিশ এই ঘটনায় মঙ্গলবার সাঁতারের প্রশিক্ষক প্রসেনজিৎ সোম ও কেয়ারটেকার গোপীমোহন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে। বুধবার তাঁদের সিজেএম আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ছাত্রটির সঙ্গে দু’টি মোবাইল ফোন ছিল। সেই ফোন দু’টি পরীক্ষা করে আমরা জানার চেষ্টা করছি, পুলে যাওয়ার আগে বা সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে কাদের কথা হয়েছে।” |
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, পুলের কাছাকাছি থাকা কয়েক জন রাত ৮টা পযর্ন্ত ওই ছাত্রকে সাঁতর কাটতে দেখেছেন। এ দিকে, ধৃত কেয়ারটেকার গোপীমোহন জেরায় জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি দেখতে পান পুলের জলে কিছু ভাসছে। তখনও তাঁর কাছে রমেনের জমা রেখে যাওয়া জামাকাপড় বা মোবাইল ফোন দু’টি ছিল। কিন্তু সে কোথায় গেল, তা তিনি জানতেন না। তিনি পুলের ইনস্ট্রাক্টর শঙ্কর সরকারকে ডেকে ভাসমান জিনিসটি দেখতে গিয়ে বোঝেন, সেটি রমেনের দেহ। তাঁরা থানায় ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ গিয়ে তদন্ত শুরু করার পরে দু’জনেই গা-ঢাকা দেন।
পুলিশের দাবি, রমেনের জামাকাপড় ও মোবাইল দু’টি তাঁদের কাছে থাকা সত্ত্বেও কেন ওই দুই কর্মী তাঁর খোঁজ করলেন না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ওই পুলের পাশে প্রায়ই মদ্যপানের আসর বসত। সেখানে কারা উপস্থিত থাকতেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কেষ্টবাবুর দাবি, “অসুস্থতার জন্য আমি প্রায় এক বছর এই পুলে রাতে টহল দিতাম না। সব দায়িত্ব দিয়েছিলাম শঙ্করকে। তবে শুনেছি, কেয়ারটেকার গোপীমোহন কিছু অবাঞ্ছিত লোকজনকে এখানে ঢুকতে দিত। কিছু খারাপ কাজকর্মও হয়েছে বলে শুনেছি।” তিনি মেনে নেন, “আমাদের তরফে কিছু পরিচালনগত ত্রুটি ছিল। তার জেরেই এই কাণ্ড ঘটেছে।” কী ধরনের পরিচালনগত ত্রুটি ছিল, সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি কিছু বলতে চাননি। পুলিশ সুপার বলেন, “মৃত ছাত্রের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই রিপোর্ট মিললে ঘটনা আরও খানিকটা পরিষ্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।” |