বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল গ্রামের একমাত্র স্কুলটির জন্য কিছু করুক তাঁদের ছেলে। সেই কথা মনে রেখে, পড়ুয়াদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য শিক্ষক দিবসে এলাকার দু’টি স্কুলকে নিজের সঞ্চয় থেকে মোট ১ লক্ষ টাকা আর্থিক দান করলেন এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাতে খুশি ওই দুই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা।
বারাবনির দোমহানি গ্রামের বাসিন্দা রণজিৎকুমার মাজি বারাবনির চিচুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন ২০০২ সালে। জন্ম বারাবনি থানার পুচড়ায়। সেই পুচড়ারই ভগবান মহাবীর দিগম্বর জৈন সড়াক উচ্চবিদ্যালয়কে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন রণজিৎবাবু। অন্য দিকে, বারাবনির দোমহানি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়কে দিয়েছেন আরও ৫০ হাজার টাকা। |
রণজিৎবাবু জানান, তাঁর বাবা শশধর মাজি ও মা তিনুবালাদেবীর ইচ্ছার কথা মনে রেখেই এই সিদ্ধান্ত। তবে, তাঁর ইচ্ছা স্কুলের পরিকাঠামো নয়, বরং ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও খেলাধূলায় উৎসাহ দিতেই ব্যয় করা হোক এই অর্থ। তাঁর কথায়, “আমি ভাবলাম স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নয়নে সরকারি সাহায্য মেলে। কিন্তু যারা স্কুলের প্রাণ, সেই ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশের জন্য বিশেষ উৎসাহ দরকার। সেই উদ্দেশ্যেই এই টাকা খরচ হোক।” দিগম্বর জৈন সড়াক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায় জানান, ওই টাকা ব্যঙ্কে স্থায়ী আমানতে জমা থাকবে। সেখান থেকে প্রতি বছর সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রতিটিতে বাৎসরিক পরীক্ষায় প্রথম তিনজন স্থানাধিকারীকে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হবে। রণজিৎবাবুর স্বর্গীয় বাবা, মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দোমহানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা বক্সি অবশ্য জানান, তাঁদের স্কুলে দানের টাকা ব্যয় করা হবে ক্রীড়া ক্ষেত্রে। ওই টাকা ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা করা হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত সুদ রণজিৎবাবুর স্বর্গীয় স্ত্রী প্রিয়ংবদাদেবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সফল ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হবে। শিপ্রাদেবী জানান, একবার বার্ষিক অনুষ্ঠানে রণজিৎবাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্কুলের পক্ষ থেকে। তিনি সেখানে এসে শুনেছিলেন, স্কুলের ক্রীড়া খাতে যথেষ্ট অর্থ না থাকায় ছাত্রীদের ভালো পুরস্কার দেওয়া যায় না। রণজিৎবাবু বলেন, “এই কথা শোনার পর আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম, মেয়েরা খেলাধূলা করে, অথচ ভালো পুরস্কার পায় না। এরা তো উৎসাহ হারাবে। তাই আমার সঞ্চয়ের খুব সামান্য একটা অংশ স্কুলকে দিয়েছি।” শিপ্রাদেবী জানান, কিছু বিভাগীয় কাজ বাকি রয়েছে। তা মিটলেই ওই টাকা রণজিৎবাবুর কাছ থেকে এনে ব্যঙ্কে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা করা হবে।
প্রায় ৭২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষককে কুর্নিশ জানিয়েছেন ওই দুই স্কুলের শিক্ষক, পড়ুয়া ও এলাকার বাসিন্দারা। গর্বিত প্রতিবেশিরাও। শিক্ষক ও পড়ুয়ারা বলেন, “উনি আদর্শ হয়ে রইলেন।” আর রণজিৎবাবু বলছেন, “ছাত্রদের পাশে থাকতে পেরে ধন্য আমি।” |