ভাগীরথীর ধোঁয়া থেকে ছড়াল আমরির আতঙ্ক
প্রাণভয়ে একরত্তি শিশুকে কোলে আঁকড়ে হুড়মুড়িয়ে নার্সিংহোমের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলেন সোনালি চক্রবর্তী। পার্ক স্ট্রিটের ওই চিকিৎসাকেন্দ্রের চারতলায় সদ্যোজাতদের ওয়ার্ডের (নার্সারি) আশপাশ তখন ঘিরেছে কালো, ঝাঁঝালো ধোঁয়ায়। হাসপাতালে ভর্তি অন্য শিশুদের আতঙ্কিত পরিজনেরাও ছুটছেন এ দিক-ও দিক।
ঢাকুরিয়ার আমরি-র আগুনে মর্মান্তিক মৃত্যু-মিছিলের স্মৃতি এখনও টাটকা এ শহরে। বিষ-ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে প্রাণ গিয়েছিল ৯৩ জন অসহায় রোগীর। সোমবার বিকেলে পার্ক স্ট্রিটের ‘ভাগীরথী নেওটিয়া উওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার’-এ কিছুটা জায়গা ধোঁয়ায় ভরতেই তাই তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। ওই চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্মী ও দমকলের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও প্রশ্ন উঠেছে সেখানকার সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।
দমকল সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ ওই নার্সিংহোমের চারতলায় সদ্যোজাতদের ওয়ার্ডের পাশেই ওষুধ সংরক্ষণের একটি ফ্রিজে আগুন লাগে। গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। দ্রুত ওই তলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন কর্মীরা। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, শর্ট-সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল। দমকলের অভিযোগ, ওই নার্সিংহোমের ট্রান্সফর্মার, সুইচ-গিয়ার, জেনারেটর-রুমেও সুরক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।
আগুনের খবর পেয়ে শিশু কোলে এক আতঙ্কিত মা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
নার্সিংহোমের চিফ অপারেটিং অফিসার, কর্নেল শিবাজি সমাদ্দার অবশ্য এই অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, নার্সিংহোমের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করেছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আগুন নেভানোর স্বয়ংক্রিয় জল ছেটানোর যন্ত্র (স্প্রিঙ্কলার) থেকে প্রচুর জল ছড়ানোয় ঘটনাটি বড় বলে মনে করা হচ্ছে। শিবাজিবাবু বলেন, “নার্সারির একটি ফ্রিজে ওষুধ সংরক্ষণ করা হত। সেটিরই কম্প্রেসর এ দিন প্রচণ্ড শব্দে ফেটে যায়। ওই ফ্রিজটি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”
অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওই নার্সারিতেই বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন সোনালিদেবী। তিনি বলেন, “হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে কিছু ফাটার আওয়াজ পেলাম। ফ্রিজ থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছিল। সঙ্গে প্রচণ্ড ধোঁয়া। আমরি-র দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। তিলমাত্র অপেক্ষা না-করেই বাচ্চাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে দৌড় দিলাম।”
ঘটনার পরে নার্সিংহোমে দিয়ে দেখা যায়, আতঙ্কিত শিশুদের পরিজনেরা ছোটাছুটি করছেন। কেউ কাঁদছেন, কেউ বা হাসপাতাল কর্মীদের অনুরোধ করছেন সন্তানকে এক বার দেখার সুযোগ করে দিতে। মেয়ে আবৃত্তিকে কোলে নিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে মন্দিরা ভট্টাচার্য বললেন, “আর এখানে থাকার সাহস হচ্ছে না। বাড়ি চলে যেতে চাই।” ডিহাইড্রেশনে ভোগায় দু’দিন আগে আবৃত্তিকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল।
শিবাজিবাবু জানান, এ দিনের ঘটনার পরে আতঙ্কে কোনও মা-ই সন্তানকে নার্সারিতে রাখতে রাজি হচ্ছেন না। তাই মায়েদের ঘরেই আলাদা বিছানায় নবজাতকদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওই নার্সিংহোমে ভর্তি আত্মীয়কে দেখতে এ দিন বিকেলে লিফ্টে চারতলায় উঠছিলেন গৌতম সিংহরায়। তিনি বলেন, “লিফ্টের দরজা খুলতেই গলগলিয়ে ঝাঁঝালো ধোঁয়া ভিতরে ঢুকল। আলো না-থাকায় চারপাশে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ভয়ে লিফ্টেই নীচে নেমে যাই।” অগ্নিকাণ্ড ঘটলে লিফ্টে নামা যে খুবই বিপজ্জনক, নেমে আসার পরে তা অবশ্য তাঁকে বুঝিয়েছেন দমকলকর্মীরা।
একতলার রিসেপশনে তখন বসে ছিলেন ডানকুনির সৈকত শীল। তিনি বলেন, “সওয়া চারটে নাগাদ জোরে অ্যালার্ম বাজল। নার্সিংহোমের কর্মী, নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে উপরে উঠলেন। কী হচ্ছে, বুঝতে পারিনি। রিসেপশনে এসি-র পাইপ থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। বাইরে এসে দেখি, চারতলার জানলা থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সেখানকার লোকেরাই অনেককে নামিয়ে আনেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.