|
|
|
|
রক্তপরীক্ষায় ভিড় জমাচ্ছে কলকাতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এত দিনে বুঝি ঘুম ভাঙল কলকাতারও!
জ্বর হলেই মানুষ তাই লাইন দিচ্ছেন পুরসভার ক্লিনিকগুলিতে। শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতেও উপচে পড়া ভিড়। বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে রক্ত দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তিন-চার ঘণ্টা। ক্লিনিক উপচে ভিড় রাস্তায় নেমে আসছে।
তবে কলকাতা পুরসভার ক্লিনিকগুলিতে ম্যালেরিয়ার রক্ত সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হলেও ডেঙ্গি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জ্বরের পাঁচ দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালেও এক নিয়ম। তাই মানুষ ভিড় করছেন বেসরকারি ক্লিনিকে। শুধু ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা নয়, লিভারের নানা এনজাইমের পরীক্ষার জন্যও। সরকারি হাসপাতালেও সেই পরিকাঠামো রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকের সুপারিশ ছাড়া সেই সব পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। ফলে ভরসা বেসরকারি ক্লিনিকই।
বিধাননগরের ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গি-আতঙ্ক। বিধাননগর উত্তর থানার আইসি দিলীপ হাজরা ও বিধাননগর পূর্ব থানার আইসি শেখর রায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রবিবার সকালেই প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেলেঘাটার নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন পাপিয়া দে। চিকিৎসকেরা সন্দেহ করছেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তিনি। বাড়িতে দুই মেয়ে। এক জনের বয়স সাড়ে সাত বছর অন্য জন দু’বছর। দু’বছরের সমাদৃতার আবার সোমবার সকাল থেকে ধুম জ্বর। তার জ্যাঠামশাই চন্দন দে জানান, সোমবার সকালে তাকে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া হয়েছে। |
|
রক্তপরীক্ষার ভিড়। হাতিবাগানের এক চিকিৎসা কেন্দ্রে। —নিজস্ব চিত্র। |
চন্দনবাবু বলেন, “সমাদৃতার শরীর এতটাই খারাপ হয় যে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত ছিল। কিন্তু ওর মা-ই হাসপাতালে! তাই বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। আমার দুই মেয়েরও কয়েক দিন আগে ডেঙ্গি হয়েছিল। বাড়ির অবস্থা বেশ শোচনীয়।” এমন আতান্তরে পড়েছে সল্টলেকের আইএ ব্লকের আরও এক পরিবার। যে দিন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, পরের দিন সকালেই তাঁর দুই বছরের মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত। ওইটুকু মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে সঙ্গে কে থাকবে? মা তো নিজেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, ডেঙ্গি-নিয়ন্ত্রণে বেশি সতর্ক হতে হবে সাধারণ মানুষকেই। তিনি দাবি করেন, বিধাননগর অঞ্চলে রাস্তায় বা সরকারের এক্তিয়ারে থাকা জায়গায় মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। বাড়তি লোক লাগিয়ে প্রতিষেধক ছড়ানো হচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে খালের জলেও। তাঁর দাবি, “বিভিন্ন বাড়ির বাতিল আসবাবে, ফুলের টবে জমা জলে, এমনকী শুকনো রজনীগন্ধা ফুলেও মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।”
কলকাতা পুরসভার ১২টি বিশেষ ক্যাম্পে রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ আসছেন। এখনও পর্যন্ত প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ায় ৩৭৭ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পার্ক সার্কাস ময়দানে এমনই একটি ক্যাম্পে সোমবার গিয়ে দেখা গেল, শিশুদের নিয়েও মানুষ রক্ত পরীক্ষার জন্য ভিড় জমিয়েছেন। চিকিৎসক সুগত চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানালেন, গত ১ সেপ্টেম্বর এক দিনে মোট ৪৬ জন রক্ত পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জনের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল।
ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন স্থান বদলের কারণে এ বার ওই মশার দাপট কমাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুরসভাকে। শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার এটাই অন্যতম এক কারণ বলে মনে করছেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তিনি বলেন, “এ বারে যে শিক্ষা পেলাম, তাতে আগামী বছর থেকে ডেঙ্গি দমনের কৌশল বদলাতে হবে।”
শহরের কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে সোমবার পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ অফিসারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও অতীনবাবু। কলকাতার যে সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি, সেই এলাকার বরো চেয়ারম্যানদের ডাকা হয় ওই বৈঠকে।
শোভনবাবু জানান, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর বরোয় ওই রোগের প্রকোপ বেশি। তবে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াইশো’র বেশি। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনের দেহে জীবাণু মিলেছে। ওই সব এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় আরও বেশি কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। |
|
|
|
|
|