গত ৬ মাসে একের পর এক বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সোনার দোকানে চুরির ঘটনাও রয়েছে কয়েকটি। তার উপর ছিনতাই, কেপমারির ঘটনাও ঘটছে আকছার। পুলিশের কাছে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়লেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে বার বার আঙুল তুলেছেন এলাকার মানুষ। মানুষের ক্ষোভকে সামাল দিতে পুলিশ প্রশাসনে রদবদলও করা হয়েছে। কিন্তু তা যে বনগাঁ মহকুমায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, কেপমারির ঘটনায় এক বিন্দুও ছাপ ফেলতে পারেনি তার প্রমাণ রবিবার রাতে পাইকপাড়া এলাকায় সোনার দোকানে ফের ডাকাতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ-বাগদা সড়কের ধারে পাইকপাড়া বাজারে সোনার দোকান পিণ্টু বিশ্বাসের। রবিবার রাত ৯টা নাগাদ তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। সোমবার সকালে তাঁর মামা উত্তম বিশ্বাস দোকান খুলতে এসে দেখেন দোকান লন্ডভন্ড। সিন্দুক খোলা। অভিযোগ, রবিবার গভীর রাতে পিণ্টুবাবুর দোকানের পিছনের দিকের সিমেন্টের গ্রিল ও একটি কাঠের দরজা ও কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীরা। তার পর শো-কেস ও সিন্দুক ভেঙে সমস্ত গয়নাগাটি নিয়ে চম্পট দেয়। পিণ্টপবাবু বলেন, “দুষ্কৃতীরা প্রায় ৩ লক্ষ টাকার অলঙ্কার নিয়ে গিয়েছে। এই ক্ষতি কী ভাবে সামাল দেব জানি না।” বনগাঁ থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। পৌঁছে যান বনগাঁ চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক বিনয় সিংহ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।”
পুলিশকর্তা এমন আশ্বাস দিলেও তাতে ভরসা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ, পাইকপাড়া বাজারে এর আগে একটি মোবাইল ফোনের শো-রুমে চুরির ঘটনা ঘটে। যথারীতি পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেয়। কিন্তু ওই ঘটনায় আজ পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি তারা। পাইকপাড়া বাজারে বহু বছর ধরেই পাহারা দেওয়ার জন্য আরজি পার্টি রয়েছে। রবিবার রাতেও যথারীতি তাঁরা পাহারায় ছিলেন। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটল তা নিয়ে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও পাইকপাড়া বাজার আর জি পার্টির সম্পাদক প্রণব দত্ত বলেন, “রবিবার রাতেও আমাদের সদস্যরা নৈশ পাহারায় ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করে জেনেছি, ভোর চারটে পর্যন্ত তাঁরা পাহারা দেন। এ ছাড়া কাজের সূত্রে যাঁরা ভোরে উঠে বেরোন তাঁদেরও ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি।”
|
“এসডিপিও-কে বলেছি, ‘‘ইচ্ছা হলে দুষ্কৃতীদের গ্রেফাতার করবেন। আমরা আর আন্দোলন করব না। কেননা আন্দোলন করে যখন ফল পাওয়া যায় না, তখন সে সবের কী দরকার?”
বিনয় সিংহ
(বনগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক) |
|
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পাইকপাড়ার ঘটনায় দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। সামনেই পুজো। এ ভাবে চললে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে।”
বিশ্বজিৎ দাস
(বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক) |
|
|
বার বার চুরি-ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, বাজারে কয়েকটি চোলাইয়ের দোকান রয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখামে চোলাই বিক্রি হয়। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা সেখানে চোলাই কেতে আসে। পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না। গত ২৫ মে বনগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র বাটার মোড়ে ভরসন্ধ্যায় ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নড়েচড়ে বলে পুলিশ প্রশাসন। ওই ঘটনায় আজ পর্যন্ত তিন জন গ্রেফতার হলেও খোয়া যাওয়া অলঙ্কার আজও উদ্ধার হয়নি।
ওই ঘটনার পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে বন্ধ বিক্ষোভে জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ। ঘটনার পর ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিল কুমার, আই জি (দক্ষিণবঙ্গ) মিহির ভট্টাচার্য বনগাঁয় এসে দুষ্কৃতীদের ধরার প্রতিশ্রুতি দেন। বদলি করা হয় বনগাঁর এসডিপিও জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় ও বনগাঁ থানার আইসি স্বপন দে-কে।
অবশ্য ব্যবসায়ীদের দাবি, তিনজন ধরা পড়লেও প্রকৃত অপরাধীরা এখনও অধরা। নতুন এসডিপিও এবং আইসি আসার পরে অনেকে ভেবেছিলেন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। বাকি অপরাধীরা ধরা পড়বে। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূরণ হওয়া দূরের কথা চুরি-ডাকাতি ঘটেই চলেছে। এক সময় অপরাধীদের ধরার দাবিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, পুলিশের এ হেন ‘পারদর্শিতা’য় তাঁরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। এতটাই যে, অনেকের মুখেই এখন শোনা যাচ্ছে, ‘আন্দোলন করেও যখন পুলিশের টনক নড়ে না। তখন আন্দোলন করে কী হবে’।
বিনয়বাবুর কথায়, “এসডিপিও-কে বলেছি, ‘‘ইচ্ছা হলে দুষ্কৃতীদের গ্রেফাতার করবেন। আমরা আর আন্দোলন করব না। কেননা আন্দোলন করে যখন ফল পাওয়া যায় না, তখন সে সবের কী দরকার?” স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সম্প্রতি ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা বাড়ছে। রাতে পুলিশের টহল দেখাই যায় না। উল্টে দুষ্কৃতী ধরার নামে পুলিশ সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছে।
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পাইকপাড়ার ঘটনায় দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। সামনেই পুজো। এ ভাবে চললে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে।” |