ফের বারাসত, শ্লীলতাহানি ঠেকাতে গিয়ে খুন প্রৌঢ়
রদুপুরে পাড়ায় ঢুকে দুই মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিল দুই মদ্যপ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারাত্মক জখম হন স্থানীয় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক বিকাশবন্ধু মল্লিক (৫৭)। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। শুধু ভাল চিকিৎসকই নন, এলাকার প্রিয় মানুষ হিসেবেও পরিচিতি ছিল বিকাশবাবুর। ঘটনায় উত্তেজিত জনতা চড়াও হয় স্থানীয় চোলাইয়ের ঠেকে। ভেঙে গুঁড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। রাতে এক অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলেও দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল বারাসতের কদম্বগাছি।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দিদির সম্মান বাঁচাতে গিয়ে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। তার পর দেড় বছরে প্রশাসনের হাজারো আশ্বাসেও যে বিশেষ কাজ হয়নি, বারাসত যে বারাসতেই রয়ে গিয়েছে, সেটা আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সোমবার দুপুরের ঘটনা। এ বার ঘটনাস্থল কদম্বগাছি। স্থানীয় মানুষ বলছেন, দুষ্কৃতীদের সাহস এতটাই বেড়েছে যে, তারা দিনেদুপুরে পাড়ায় উৎপাত শুরু করেছে। হানা দিচ্ছে বাড়িতে। বেপরোয়া মারধরেও পিছপা হচ্ছে না। এত আশ্বাসের পরেও তা হলে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়?
বিকাশবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুটছে কদম্বগাছি এলাকা। কদম্বগাছি রেল স্টেশনের কাছে তাঁর চিকিৎসাকেন্দ্রে বহু অভাবী মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতেন। স্ত্রী, মা ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে কদম্বগাছির পূর্ব ইছাপুরের বাড়িতে থাকতেন তিনি। আর এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর দু’য়েক আগে তাঁর ‘বাইপাস’ অস্ত্রোপচার হয়েছিল। অসুস্থ হলেও এলাকার মানুষের আপদে বিপদে সব সময় এগিয়ে এসেছেন তিনি। যেমন গিয়েছিলেন এ দিনও।
কী হয়েছিল এ দিন?
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত। বিকাশবাবুর প্রতিবেশী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জ্যোৎস্না মণ্ডল জানান, দুপুরে পাড়ায় হঠাৎ হানা দেয় দুই মদ্যপ যুবক। বাড়িতে বাড়িতে দরজা-জানলায় লাঠি দিয়ে ঘা মারতে থাকে। এই ভাবে হানা দেয় এলাকারই একটি বাড়িতে। সেখানে তখন ছিলেন মা ও মেয়ে। টিনের চালে লাঠি পেটার আওয়াজে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। তাঁদের দেখেই অকথ্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করে দুই মদ্যপ। মেয়েটির হাত ধরে টানাটানিও শুরু করে দেয়। চেঁচামেচি শুনে জ্যোৎস্নাদেবী-সহ এলাকার মহিলারা বেরিয়ে আসেন। বেরিয়ে আসেন বিকাশবাবুও। তিনি ওই যুবকদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শোনেনি ওই মদ্যপরা। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “ওই ছেলেগুলো ডাক্তারবাবুর গালে থাপ্পড় মারে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তার পরেও হাত জোড় করে ‘বাবা-বাছা’ বলে অনুরোধ করতে থাকেন বিকাশবাবু। তখন ওই মদ্যপরা বিকাশবাবুকে মারধর শুরু করে। মারের চোটে মাটিতে পড়ে যান বিকাশবাবু। সেখান থেকে তুলে তাঁকে একটি সুপুরি গাছের গায়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই জ্যোৎস্নাদেবীর ছেলে সৈকত ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি বিকাশবাবুর দুই ছেলে, অরুণ এবং হিমাংশুকে (কদম্বগাছির ধর্মতলায় তাঁদের মোটর গ্যারাজ রয়েছে) ফোন করেন। তা দেখে ওই যুবকরা ফের গালিগালাজ শুরু করে। যাওয়ার সময়ে বলে যায়, ‘পুলিশ কী করে দেখি!’
এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ধরাধরি করে ওই চিকিৎসককে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “গাছে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন উনি। আমরা মাথায় জল দিতেই দু’বার নিঃশ্বাস ফেলে নিস্তেজ হয়ে গেলেন।”
বিকাশবাবুর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার একটি কলাবাগানের ভিতরে কতগুলো ঝুপড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ঘরগুলিতে নিয়মিত চোলাই-জুয়ার আসর বসত। অন্য দুষ্কৃতীদের সঙ্গে অভিযুক্তরাও সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করত। পুলিশকে বারবার জানিয়েও সেই ঠেক বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ। ভাঙচুর-আগুনের পরে রাস্তা অবরোধের চেষ্টাও হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অবস্থা আয়ত্তে আনে।
পরে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেছেন, “এর আগে যতগুলি ঘটনা ঘটেছে, সব ক’টি ক্ষেত্রেই দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিনও এক জনকে ধরা হয়েছে। অন্য জনের খোঁজ চলছে।”
ওই ঘটনার পর ভেঙে পড়েছে মল্লিক পরিবার। বিকাশবাবুর ছোট মেয়ে মালতী কদম্বগাছি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। তিনি এ দিন বলেন, “দুষ্কৃতীরা যে এ রকম তাণ্ডব চালাবে, ভাবতেও পারিনি!” বিকাশবাবুর স্ত্রী কবিতা বলেন, “ওরা বাড়িতে ঢুকে মানুষটাকে খুন করে গেল!”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনায় দুই অভিযুক্ত কদম্বগাছি রেল কলোনির বাসিন্দা। নাম সিরাজুল ইসলাম এবং মহম্মদ জালালুদ্দিন। সন্ধ্যার দিকে খবর মেলে জালালুদ্দিন বাড়িতে এসেছে। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে আটক করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

জুলুমনামা
২০১১
১৪ ফেব্রুয়ারি: দিদির সম্মান বাঁচাতে খুন রাজীব দাস
২ অগস্ট: ডিএম অফিসের সামনে আক্রান্ত পুলিশ পরিবার
২সেপ্টেম্বর: ডিএম অফিসের সামনেই পুলিশকে গুলি
২০১২
২৭ এপ্রিল: ছাত্রী অপহরণ, মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার
২৭ জুলাই: স্টেশনে ছাত্রীকে কটূক্তি, প্রহৃত বাবা
২০ অগস্ট: কিশোরীর শ্লীলতাহানি চার দুষ্কৃতীর
২১ অগস্ট: বামনগাছিতে গণধর্ষিতা পানশালার গায়িকা
৩১ অগস্ট: মেয়েকে শ্লীলতাহানি, প্রহৃত মা
৩ সেপ্টেম্বর: শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে খুন চিকিৎসক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.