নেদারল্যান্ডসে পনেরো দিনের ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করে দিলেন ‘উইন’ কোভারম্যান্স। বলে দিলেন, “দেশের সব ক্লাবের কোচকে একই ঘরানায় ট্রেনিং করাতে বাধ্য না করতে পারলে নেহরু কাপ জয়ের পর যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে তার সুফল পাওয়া যাবে না।”
আপাতত দু’মাস সেই অর্থে কোচিং করানোর নেই কোভারম্যান্সের। ফেড কাপ, আই লিগের পর ফিফা-র দুটো আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে জাতীয় দলের। তার আগে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ক্লাবের খেলা দেখে নতুন ফুটবলার বেছে নিতে চান নেহরু কাপজয়ী ভারতের ডাচ কোচ। শিলিগুড়ি আর রাঁচিতে ফেড কাপ দেখার সময় ক্লাব কোচেদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছে আছে কোভারম্যান্সের। তাঁর কথায়, “ক্লাবে ফুটবলাররা এক ঘরানার ট্রেনিং করবে আর জাতীয় শিবিরে এসে অন্য সিস্টেম। এটা হয় না। বিশ্ব জুড়ে পজেশনাল ফুটবল চলছে। ভারতীয় দলের জন্যও মাটিতে পাস রেখে খেলাটা সাফল্যের সেরা রসায়ন হতে পারে। ক্লাব কোচেরা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত হবেন ।”
জেপি গ্রিনের রিসর্টে ফিরে ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সুনীল ছেত্রী-গৌরমাঙ্গীর মতো দু’একজন বাদে সবারই সোমবার সকালের ফ্লাইটে টিকিট কাটা ছিল। সুনীলের পর্তুগাল যাওয়ার কথা বুধবার। রাত দেড়টাতেও ট্রফি নিয়ে নবি-মেহতাবদের উচ্ছ্বাস উপভোগ করছিলেন কোভারম্যান্স। সবাইকে ডেকে বলেন,“ছুটি কাটাতে দেশে যাচ্ছি। ফেড কাপে দেখা হবে।”
ক্যামেরুনের বিরদ্ধে জয় থেকে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ভারতের কোনও উন্নতি না হলেও, এই জয়কে সামনে রেখেই ভারতীয় ফুটবলের নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে, মত কোভারম্যান্সের। বললেন, “আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি আরও খেলা দরকার। এবং সেটা ক্যামেরুনের মতো ভাল দলের বিরুদ্ধে। তাতে ফুটবলারদের সাহস আর আত্মবিশ্বাস দুই-ই বাড়ে।” ফেডারেশনের যা হালচাল তাতে ডাচ কোচের ইচ্ছে কতটা সফল হবে তা বলা কঠিন। প্রতিবার নেহরু কাপ বা সাফ কাপ জেতে ভারত, তার পর নানা কথা হয়। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল বলেই যান, জাতীয় টিমের সাফল্য না এলে এ দেশের ফুটবল এগোবে না। কিন্তু যেটা করা দরকার সেটা শেষ পর্যন্ত তা হয় না।
কোভারম্যান্স মাত্র এক মাস হল ভারতের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এত কম সময়ে তাঁর সাফল্যের রসায়ন কী? বব হাউটনের সঙ্গেও যাঁরা কাজ করেছেন তাদের মত হল, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘নাম’ কোভারম্যান্সের কাছে গুরুত্ব পায় না। সেখানে কোনও আপস করতেও রাজি নন। কোনও ফুটবলারকে আলাদা চোখে দেখেন না। কারও পরামর্শে টিম করেন না। অনুশীলনে ভাল খেললেই টিমে ঢোকা সম্ভব। টিমে ঢোকার যুদ্ধটা লাগিয়ে রাখেন।
ববের মতো একটাই টিমকে বয়ে বেড়ানোর পক্ষপাতী নন উইম। চোট পাওয়া ফুটবলারকে দলে দীর্ঘদিন রাখার পক্ষপাতী নন জাতীয় টিডি রব বানের পরামর্শে আসা ডাচ কোচ। সে জন্যই চোট পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে দেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকার জেজেকে বাদ দিয়েছেন। টিমের সঙ্গে থাকা একাধিক সাপোর্টিং স্টাফের মত, বব থাকলে মেহতাব, সঞ্জু, নির্মল, লেনি বা ফ্রান্সিসের মতো ছেলেরা সুযোগ পেত কি না সন্দেহ। সেই কবে ২০০৫-এ জাতীয় দলে খেলেছিলেন মেহতাব। রবিবার রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত কেক কাটা ও শ্যাম্পেন উৎসব শেষ হওয়ার পর বারুইপুরের ছেলে বলছিলেন, “জাতীয় দলে খেলার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। দলে কেমন যেন একটা কোটা সিস্টেম চলছিল মনে হত। একই ফুটবলারদের বারবার ডাকা হত। অন্য প্লেয়াররা ক্লাব ফুটবলে ভাল খেললেও তাদের ডাকা হত না। কোভারম্যান্স আমাকে ডেকেছিলেন। আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নেহরু কাপ জয় আমার জীবনের সেরা সাফল্য বলতে পারেন।” রবিবার ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে যে বলটা থেকে পেনাল্টি পায় ভারত, সেটা সুনীলকে বাড়িয়েছিলেন মেহতাব। বলছিলেন, “সত্যি বলছি, সবাই মিলে এ রকম না ঝাঁপালে চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম না।”
কোভারম্যান্স যেহেতু নতুন এসেছেন তাই নেহরু কাপের দল নির্বাচনের আগে প্রাক্তন জাতীয় কোচ স্যাভিও মেদেইরাকে তাঁর সহকারী করেছিল ফেডারেশন। কিন্তু স্যাভিওর পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি ফুটবলারদের সম্পর্কে নিজেও খোঁজখবর চালান ডাচ কোচ। কোভারম্যান্স বলছিলেন, “আমার ধারণা যে টিমটা খেলছে, তার বাইরেও এ দেশে আরও অনেক ভাল ফুটবলার আছে। তাদের খুঁজে বার করব। শিবিরে ডাকব।” শুধু ফেড কাপ বা আই লিগে বিভিন্ন ক্লাবে বিদেশি স্ট্রাইকারদের দাপট তাঁকে চিন্তায় ফেলছে। “ভাল স্ট্রাইকার তা হলে দেখার সুযোগ পাব কোথায়?” ফেডারেশন কর্তাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে এখনও পাননি কোভারম্যান্স।
|